বেশ কিছু আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটিসহ মোট সাতটি আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার জন্য রাখা বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দেন।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারাত্মক অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে এসব প্রার্থী রাখা হয়েছে। তিনটি আসনেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হাতের আঙুলের টিপসই নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সিলেট বিভাগের আরও চারটি এলাকায় বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিলেটে একটি, সুনামগঞ্জে দুইটি আসনসহ এই বিভাগে মোট তিনটি আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির সদস্য ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে। সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা) আসনে বিকল্প প্রার্থী করা হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকে। আর সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলকে। সিলেট-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে আসন সমঝোতায় মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে ছেড়ে দেওয়া হলেও এই আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি চাকসু মামুন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করতে পারেন বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, এটি দলীয় কৌশল ও পরিকল্পনার একটি অংশ। আপাতত বিকল্প প্রার্থী হিসেবে এই কয়েকজনকে মনোনয়ন জমা দিতে বলা হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন দলের নির্দেশনা দেওয়ার পর যাকে বলা হবে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী রদবদল করেছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও মিত্রদের জন্য ১৫টি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। তবে দলের প্রার্থী বদল বা নতুন করে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসনেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-১৭ আসনে তারেক রহমানের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, চেয়ারপারসনের অপর উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক গতকাল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মনোনয়নপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেন।
এদিকে ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন। তিনি প্রচারও শুরু করেছিলেন। পার্থ এখন ভোলা-১ (সদর) আসনে নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১২ (তেজগাঁও-হাতিরঝিল-শেরেবাংলা নগর) আসনে সাইফুল আলম নীরবের বদলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি সেখানে ‘কোদাল’ প্রতীকে ভোট করবেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামান। তিনি নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশের পর সেখানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ঢাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও একাধিক আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে রাউজানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনটি এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্ত হওয়ায় আসনটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে সরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১১ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১০ আসনে (বন্দর-পতেঙ্গা) বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রথমে বিএনপি নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া-কসবা), মুন্সিগঞ্জ-২ (টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং) ও মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর ও গজারিয়া) আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের পরিবর্তে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে এক্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরিবর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি গতকাল তাঁর এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান পদত্যাগ করার পর তাঁকে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের পরিবর্তে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে প্রার্থী করা হয়েছে।
এ ছাড়া যশোর-১ (শার্শা), যশোর-৫ (মণিরামপুর) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর-১ আসনে মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বাদ দিয়ে শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে, যশোর-৫ আসনে ইকবাল হোসেনের পরিবর্তে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে, যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলামের পরিবর্তে কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে (শিবচর) কামাল জামাল মোল্লার পরিবর্তে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দুই দফায় বিএনপি ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে সমমনা ও শরিকদের মধ্যে আরও ১৫টি আসন ছাড় দেওয়া হয়। বাকি ১৩টি আসনেও মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু তাঁদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার জানামতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন একজন-দুজন করে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।’ প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। সব নির্বাচনেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগমুহূর্তেও প্রার্থী পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন কারণে এই পরিবর্তন করা হয়।