যে প্রেক্ষাপটে দেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমনপীড়ন এবং একের পর এক মামলার চাপে ২০০৮ সালে ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারেক রহমান। সে সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নই তাকে চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগে বাধ্য করে।
‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে তৎকালীন সরকার তাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোররাতে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। টানা ৫৫৪ দিনের কারাগারে থাকাকালে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে, যার ফলে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনে যান। তবে দেশে ফিরে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ না থাকায় এবং রাজনৈতিক মামলার কারণে তিনি বিদেশেই অবস্থান করতে বাধ্য হন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়, তারেক রহমান স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাননি। বরং একটি অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। দলটির দাবি, তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে ধ্বংস করার অংশ ছিল।
বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। বিদেশে অবস্থাকালে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দলীয় সিদ্ধান্তে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
দীর্ঘ সতেরো বছর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা উপলক্ষে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।
দেশে ফেরার পর প্রথম তিন দিন তিনি যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, সে তথ্য জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে তারেক রহমানের তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, বৃহম্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, এরপর শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুটি কর্মসূচি রয়েছে। ওই দিন জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এ জন্য তারেক রহমান সশরীর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে যাবেন কি না, সেটা পরে জানানো হবে। ওই দিনই ভোটার হতে সব কাজ করবেন। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন। কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান।
এরপর আরেকটি অনুষ্ঠান হবে, সেটার বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে জানা গেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলায়েন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে লণ্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সিলেটে যাত্রা বিরতীর পর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। যেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।