আসন সমঝোতা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে বিএনপিতে
একের পর এক আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম
বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া সমমনা দল ও জোটকে আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি আলোচনা চালালেও এটি মানতে নারাজ দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বেশ কয়েকটি আসনে বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মিত্র দলের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপির মিত্র হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, চারদলীয় বাম জোট, লেবার পার্টিসহ প্রায় ৫৭টি দল ও জোট ছিল।
গত অক্টোবরে দলগুলো মোট ২২২টি আসন দাবি করে। এর মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৪০টি আসন চেয়েছে। ১২ দলীয় জোট ২১টি, গণফোরাম ১৫, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, বিজেপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) ৫, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬ এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ১০টি আসন চেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে চারটি আসনে সমঝোতার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ঘোষণা করা হয়, নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তের মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সিলেট-৫ আসনে মাওলানা মো. উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব নির্বাচন করবেন। এসব আসনে বিএনপি তাদের কোনো প্রার্থী ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
তবে দলের এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসন থেকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। এ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা ছয়বার নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিবারই বিজয়ী হয়েছেন। জুনায়েদ আল হাবীব দলীয় প্রতীক ‘খেজুরগাছ’ নিয়ে নির্বাচন করবেন।
রুমিন ফারহানা গতকাল বলেন, বুধবার (আজ) তাঁর পক্ষে নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। একই রকম কথা বলেছেন বিএনপির অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা এসএন তরুণ দে ও আক্তার হোসেন। রুমিন ফারহানাসহ দলের তিন নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করলে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সবাইকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে ছেড়েছে বিএনপি। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ এর সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী বিএনপির মোহাম্মদ আলীর।
নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী নির্বাচন করবেন। এখানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগনে প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও মনে করেছিলেন, তিনি মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আশাহত নেতাকর্মীদের কতটুকু নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি নেতা অনেকেই।
গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা
আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সম্পর্কের টানাপোড়েন এখনও কাটেনি। গণঅধিকার পরিষদ গত অক্টোবরে বিএনপির কাছে ৩৫টি আসনের তালিকা জমা দেয়। গত রোববার রাতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মোট ১০টি আসনের দাবি তোলে গণঅধিকার পরিষদ। এর মধ্যে নিম্নকক্ষে সাতজন, উচ্চকক্ষে দুইজন এবং একটি সংরক্ষিত আসন। বিএনপির পক্ষ থেকে নিম্নকক্ষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জন্য পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের জন্য ঝিনাইদহ-২ আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয় নিশ্চিত করা হয় এবং উচ্চকক্ষ ও সংরক্ষিত আসনের দাবি মানার কথা জানানো হয়। কিন্তু এতে নারাজ গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। তারা নিম্নকক্ষে চারটি আসনের কম মানবেন না বলে স্পষ্ট করে জানানো হয়।
কোনো সমঝোতা না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় দলটি। এতে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রক্রিয়া বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ চেষ্টা হিসেবে ওই সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে আবারও আলোচনার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
পটুয়াখালী-৩ আসনে নুরুল হক নুরের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন।