Logo
Logo
×

রাজনীতি

রাজপথে আন্দোলন: ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ৩ দাবি আদায়ে শতভাগ ব্যর্থ জামায়াত

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

রাজপথে আন্দোলন: ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ৩ দাবি আদায়ে শতভাগ ব্যর্থ জামায়াত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর দু’টি পক্ষ পরস্পর বিরোধী অবস্থান নেয়। একটি হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও এর সঙ্গীরা এবং অপরটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর মিত্ররা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দু’টি পক্ষই ভোটারদের মুখোমুখী হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানের আগে দুই দশকের বেশি সময় ধরে একই কক্ষপথে চলা বিএনপি ও জামায়াত এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, প্রতিযোগী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী। শেখ হাসিনা শাসনের পতনের পরই এরা আলাদা হয়ে পড়ে। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামও করেছে ভিন্ন ভিন্ন দাবি নিয়ে। বিএনপির প্রধান দাবি হলো জাতীয় নির্বাচন।

অন্যদিকে জামায়াত নানা কায়দায় নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করে আসছে। নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল হিসেবে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে মাঠে নেমেছে। তার মধ্যে তিনটি ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই তিনটি দাবিতে আন্দোলন করে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও মিত্ররা।

এক. জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের আওতাধীন (সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) সব নির্বাচনের দাবিতে বছরের শুরুতেই খুব জোরালোভাবে মাঠে নামে জামায়াতে ইসলামী। একই দাবি করে দলটির মিত্র হিসেবে সম্পৃক্ত হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই দাবি দলীয়ভাবে না করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) শীর্ষনেতাদের অনেকেই তুলেছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে স্থানীয় সরকারের আওতাধীন এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনগুলোতে বলপ্রয়োগের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া স্থানীয় সরকারের মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান ও সদস্য পদগুলোও খালি রয়েছে। সাধারণ মানুষকে সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মোটামোটি দীর্ঘ সময় ধরে এই আন্দোলন চালিয়ে যায় জামায়াত, অপরদিকে বিএনপি জামায়াতের এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করে।

বিএনপির বক্তব্য ছিল, দেশের এই ক্রান্তিকালে সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশের স্টিয়ারিং থাকলে দেশ নিরাপদ। ফলে সবার আগে জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। দুইপক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান ঠিক থাকলো, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানে জামায়াতের দাবি পূরণ হলো না।

দুই. জামায়াতে ইসলামীর দাবি ছিল সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation; PR) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ণয় করতে। পিআর এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো একটি রাজনৈতিক দল মোট যত শতাংশ ভোট পায়, সংসদের ঠিক তত শতাংশ আসন পায়।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো নির্বাচনে যদি একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে মোট আসন সংখ্যার ৩০ শতাংশ আসনই ওই দলটি পাবে। জামায়াতে ইসলামী এই দাবিতে সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে বড় ধরনের গণজমায়েত করেছে। ঢাকায় বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে এই দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি নেই। নির্বাচন কমিশন সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশেও (আরপিও) এই পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়নি। জামায়াতে ইসলামী এই দাবিতে যখন মাঠে সোচ্চার ওই সময় বিএনপিও এ দাবির বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। দলটির পক্ষ থেকে যুক্তি তোলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ পিআর বুঝেনা, ভোটাররাও এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন, ফলে বিএনপি চায় প্রচলিত পদ্ধতিতেই ভোট হোক। দীর্ঘ কয়েক মাস সোচ্চার থাকার পর অনেকটা নীরবেই চুপসে যায় জামায়াত।

দলটির বিভিন্ন দাবি-ধাওয়ার মধ্যে এখনও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিটি উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু তারা এখন আর এই দাবির কথা সভা-সমাবেশে বলছেন না। জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের পর এই দাবি নিয়ে আর আলোচনারও সুযোগ নেই। অর্থাৎ আলোচিত পিআর দাবিটি এখন অপ্রাসঙ্গিক। দীর্ঘদিন রাজপথে শক্তি ব্যয় করলেও ফলাফল শূন্য।

তিন. জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দরকার হবে গণভোট। আর এই গণভোট হওয়ার তারিখ নিয়েও দু’টি পক্ষ দুই মেরুতে ছিল। বিএনপি প্রথমে চেয়েছে গণভোট হবে জাতীয় নির্বাচনের পর, পরে বলেছে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে পারে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও তার মিত্রদের দাবি ছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে।

প্রথমে জামায়াতের দাবি ছিল অক্টোবরে গণভোট, পরে নভেম্বরে গণভোটের দাবি তোলা হয়, এরপর দলটির দাবি ছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো দিন গণভোট দিতে হবে। অবশেষে যখন দেখলো দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এই সময় তড়িগড়ি যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, একইদিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট মেনে নিয়েছেন তারা। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় রাজপথে আন্দোলন করে কোনো অর্জন ছাড়াই একইদিন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট মেনে নিতে বাধ্য হয় দলটি।

শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবিতে রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু এই তিন দাবির একটিতেও সফল হলো না, শতভাগ শূন্যহাতে ঘরে ফিরলো দলটি। এখন অপেক্ষা জাতীয় নির্বাচনে কতটা সফল হয় এটা দেখার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার