কুমিল্লায় বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির বহিস্কৃত নেতা সাক্কু
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পর পর দুইবার নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন মনিরুল হক সাক্কু। দলের নির্দেশ অমান্য করে ২০২২ সালে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতা সাক্কুকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক এবং পরে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। গুঞ্জন আছে, তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কেনার ঘোষণা দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন সাক্কু। আজ রোববার মনোনয়ন ফরম কেনার কথা রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-৬ (সদর ও সদর দক্ষিণ) আসনে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী। মনোনয়ন দাবিতে দলীয় অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।
সাক্কুর ঘনিষ্ঠরা বলেন, হাজি ইয়াছিনের সঙ্গে সাক্কুর বৈরী সম্পর্ক। ফলে কৌশলগত কারণে এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রবীণ নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনে প্রচারের মাঠে নেমেছেন সাক্কু। তিনি মনোনয়ন ফরম কেনার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনেই মাঠে থাকতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাক্কুর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ঘোষণা রাজনৈতিক মেরুকরণের অংশ হতে পারে।
এর আগে মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু। এর পর ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আফজল খানের মেয়ে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ২০২২ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন সাক্কু। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর রিফাতের মৃত্যুর পর গত বছরের ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন সাক্কু। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা।
সঙ্গে বৈঠক করে সদর আসনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তিনি। সাক্কু কুমিল্লায় ফিরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, দলীয় প্রার্থী পছন্দ না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এর পর তাঁর সঙ্গে প্রচারে অংশ নেন সাক্কু। কিন্তু আজ রোববার তাঁর মনোনয়ন কেনার ঘোষণায় আবারও নতুন করে আলোচনায় আসেন সাক্কু।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মনিরুল হক সাক্কু সমকালকে বলেন, ‘মনোনয়ন কিনতে সমস্যা কী? এখনও তো মনিরুল হক চৌধুরীর জন্যই ভোট চাচ্ছি। হাজি ইয়াছিনের থেকে বেশিই মাঠে কাজ করছি। রোববার (আজ) সকালে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করব। তবে জমা দেব নিজে গিয়ে।’ তাঁর ভাষ্য, শোনা যাচ্ছে হাজি ইয়াছিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, এটা ভালো কথা। তাঁর (ইয়াছিন) কতটুকু জনপ্রিয়তা আছে, এটা প্রমাণ হয়ে যাক।
সাক্কুর মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাজি ইয়াছিন সমকালকে বলেন, যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতেই পারেন। এটা তো গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এ জন্য দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। সময় তো ফুরিয়ে যায়নি। শেষ সময়ে নেতাকর্মী ও অনুসারীদের নিয়ে মতামত জানাবেন তিনি।
সাক্কুর মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এটা সাক্কুর একটি নিজস্ব কৌশল হতে পারে। তবে এটুকু বলতে পারি, সে (সাক্কু) আমার পক্ষেই মাঠে কাজ করছে।