Logo
Logo
×

রাজনীতি

হামলার সময় সরকারের নীরবতা ছিল বিস্ময়কর : আনু মুহাম্মদ

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩০ এএম

হামলার সময় সরকারের নীরবতা ছিল বিস্ময়কর : আনু মুহাম্মদ

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং ছায়ানটে হামলার মতো ভয়ংকর ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের পর আর হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানে হামলার সময় সরকারের নীরবতা ছিল বিস্ময়কর।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। 

এ সময়য় সংবাদ সম্মেলনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, আইনজীবী মানজুর আল মতিনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

আনু মুহাম্মদ বলেছেন, একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অপমানজনক অবস্থায় নিয়ে গেছেন। ১৮ ডিসেম্বর সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যে হামলা হয়েছে, একাত্তরের পর এমন নারকীয়তা আর হয়নি। অথচ যারা হামলার শিকার হয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তারও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় সরকার ও উপদেষ্টারা নির্লিপ্ত ভূমিকা রেখেছে। এমন ভয়ংকর পরিবেশ দেখার জন্য আমরা এই সরকার আনিনি। দেশে সরকার আছে কি-না তার অস্তিত্বও বুঝা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যেভাবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট একের পর এক আক্রান্ত হয়েছে, হামলার ঘটনা ঘটেছে, এ রকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা মুক্তিযুদ্ধের পর আর হয়নি। এটা আমাদের চিন্তার মধ্যে ছিল না যে একটা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর, একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর এ রকম একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যম থেকে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কারা জড়িত, তাও চিহ্নিত। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। বরং চিহ্নিত খুনি ভারতে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে তনু, মুনিয়া, ত্বকি হত্যার কোনও বিচার করা হয়নি। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ও ছায়ানট আগে থেকেই টার্গেট করা হয়েছিল। সাংবাদিক নুরুল কবির বিগত সরকারের সময়ে সংগ্রাম করলেও তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কোনও ভূমিকা রাখেনি। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল অচিন্তনীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখেছি প্রকৃত অপরাধীকে না ধরে নিরীহদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে সরকার বলে যে একটা প্রতিষ্ঠান আছে এবং কে যে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলা কোনো আকস্মিক ঘটনা না। কারণ, বহুদিন ধরে এ নামগুলো উচ্চারিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন অধ্যাপক আন মুহাম্মদ। এগুলো হল- 

১। শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২। ১৮ ডিসেম্বর রাতজুড়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি-৩২ এ হামলাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত প্রতিটি হামলার তদন্ত করতে হবে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার করতে হবে। 

৩। সরকারকে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪। জনগণেন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে। 

৫। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংঘবদ্ধ উষ্কানিদাতাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬। ওসমান হাদির জানাজার আগে-পরে যেন কোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার