Logo
Logo
×

মতামত

তারেক রহমান কি বাংলাদেশে ফিরবেন? ব্রিটিশ আইনে কী বাধা

ILR ও ‘এন্ট্রি পাস’ ইস্যুতে আইন কী বলে ?

Icon

সলিসিটার মোল্লা মাহফুজ ইসলাম

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম

তারেক রহমান কি বাংলাদেশে ফিরবেন? ব্রিটিশ আইনে কী বাধা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছেন। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান, আশ্রয় নেওয়া এবং ভ্রমণ-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। সর্বশেষ আলোচনায় এসেছে—তিনি কি আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন? এবং ফিরলে তাঁর যুক্তরাজ্যের ILR (Indefinite Leave to Remain) স্ট্যাটাস কি ঝুঁকিতে পড়বে?

৫ বছরের বেশি থাকার ফলে ILR পাওয়ার সম্ভাবনা বাস্তব

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, কেউ যদি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে টানা পাঁচ বছর দেশটিতে থাকেন, তবে তিনি ILR পাওয়ার যোগ্য হন। তারেক রহমান যেহেতু যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরের অনেক বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন, সেহেতু তিনি ইতোমধ্যেই ILR পেয়ে গেছেন—এমনটি ধরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত।

ILR নিয়ে দেশে গেলে নতুন ঝুঁকি

ILR এ থাকা ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকলে তাঁদের স্ট্যাটাস বাতিল হতে পারে। আইন অনুযায়ী, কেউ যদি যুক্তরাজ্যের বাইরে টানা দুই বছরের বেশি সময় অবস্থান করেন, তবে তাঁর ILR বাতিল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, তারেক রহমান যদি বাংলাদেশে গিয়ে দুই বছরের বেশি সময় থাকেন, তাহলে তাঁর ILR স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ট্রাভেল ডকুমেন্ট ও নিজ দেশে ভ্রমণ

যদি কেউ Refugee Travel Document ব্যবহার করেন, তবে তিনি নিজের অরিজিন দেশ—এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ—এ ভ্রমণ করতে পারেন না। এটি হোম অফিসের সুস্পষ্ট নীতি। নিজ দেশে গেলে আশ্রয়গ্রহণের যুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং আশ্রয় স্ট্যাটাস বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে ট্রাভেল ডকুমেন্টও অকার্যকর হয়ে যায়। এ কারণে ট্রাভেল ডকুমেন্ট থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে যাওয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ বা ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশে ঢোকার জন্য ‘এন্ট্রি পাস’—নতুন বাস্তবতা

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে জানা যাচ্ছে, তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য এখন বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ ‘এন্ট্রি পাস’ প্রয়োজন হচ্ছে। এর অর্থ দাঁড়ায়—

তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট কার্যকর নেই। তাঁর পাসপোর্টটি হোম অফিসে জমা দেয়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। যা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ব্যবহারযোগ্য নয়। এখন তাঁর   

বাংলাদেশে ফেরার জন্য আলাদা অনুমতি বা বিশেষ ছাড় প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি আরো স্পষ্ট করে যে, ট্রাভেল ডকুমেন্ট থাকা অবস্থায় নিজ দেশে ভ্রমণের জটিলতা বাস্তবে প্রভাব ফেলছে।

আশ্রয় স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করলে কী হয়

যদি তিনি স্বেচ্ছায় আশ্রয় প্রত্যাহার করেন, তাহলে— ট্রাভেল ডকুমেন্ট বাতিল হবে এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট ফিরে পেলে সেই পাসপোর্টের মেয়াদ থাকলে তা ব্যবহার করে  দেশে যাওয়া যাবে। তবে আর কখনো যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া যাবে না (যদি না নতুন করে কোনো প্রযোজ্য ঝুঁকির জন্ম নেয়)। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঝুঁকি ও দায় পুরোপুরি ব্যক্তিগত হয়ে যাবে। 

ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিলে সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

তারেক রহমান যদি তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট নেন তাহলে বাংলাদেশে ভ্রমণে তাঁর আর বাধা থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সেক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। 

সংক্ষেপে বলা যায় যে ব্রিটিশ ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশে যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট নিয়েও বাংলাদেশে যেতে পারবেন। আর ILR এ থাকা অবস্থায় যদি বাংলাদেশে ২ বছরের বেশি সময় অবস্থান করেন তাহলে ILR বাতিলের ঝুঁকিতে পড়বেন। 

এছাড়া আশ্রয় পরিস্থিতি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে নিজ দেশে যাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউকেতে আশ্রয় আবেদন করা অসম্ভব (যদি না নতুন কোনো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়)।

এর বাইরে যদি উনার ব্রিটিশ পাসপোর্ট থেকে থাকে সেক্ষেত্রে নিজ দেশে করা ভ্রমণ সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।  

শেষ কথা

তারেক রহমানের প্রকৃত স্ট্যাটাস—ট্রাভেল ডকুমেন্ট, ILR, নাকি অন্য কিছু—এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নেই। তবে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বর্তমান আইন-নীতির আলোকে বলা যায়, তাঁর দেশে প্রত্যাবর্তন বহুস্তরের আইনগত বাধা ও ঝুঁকির সাথে যুক্ত। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত নির্ভর করছে—তিনি নিজে কোন স্ট্যাটাসে আছেন এবং কোন পথটি বেছে নেন।

লেখক পরিচিতি : সিনিয়র কোর্টস অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস
এমকিউ সলিসিটরস, ৫৫৪এ গ্রিন স্ট্রিট, লন্ডন।
Email: [email protected]

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার