Logo
Logo
×

মতামত

ক্ষণস্থায়ী জীবন ও কেয়ামত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ এএম

ক্ষণস্থায়ী জীবন ও কেয়ামত

সৃষ্টিকুলে মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। পরম করুনাময় আল্লাহর খুবই মহব্বতের এবং নিজের হাতে তৈরি এই মানব কুল। আঠারো হাজার মাখলুকাত এর মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি, সবার উপরে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে মানুষকে। আল্লাহর সৃষ্টি এই পৃথিবী কতই না সুন্দর ও মনোরম, যা না দেখলে মানব জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রযুক্তির বদৌলতে স্রষ্টার সৃষ্টির সৌন্দর্য অবলোকন করে আমরা মুগ্ধ হয়ে বলি সুবহানাল্লাহ।

মানবজীবন বৈচিত্র্যময়। পূর্ণবয়স্ক মানব জীবনের শৈশব-কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধ এই স্তরগুলো সূর্যের সাথে তুলনা করা যায়। ভোরের সূর্যের মিষ্টি আলোর সাথে শৈশব-কৈশোরের, দুপুরের সূর্যের আলোর প্রখর তাপ যৌবনের সাথে এবং  অস্তগামী সূর্যের সাথে বৃদ্ধ বয়সের মিল বা সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। জন্ম থেকে বৃদ্ধ অবদি যেকোনো সময় আল্লাহর ডাকে অথবা কর্ম দোষে আমাদের জীবনের ছন্দপতন হতে পারে। তখন আমরা পরিবার-পরিজনের কাছে দিনে দিনে শুধু অতীত এবং ছবি হয়ে থাকবো। সর্বোচ্চ তিন প্রজন্ম আপনাকে মনে রাখতে পারে। তারপর এই পৃথিবীতে আপনার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে মুছে যাবে কারণ এই পৃথিবীর সবকিছুই নশ্বর।

সুন্দর এই মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। মানুষের বিদ্যা, বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায় বা ভালো-মন্দ, যা কিছু অর্জন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে সম্মানের সঙ্গে অথবা অসম্মানের সঙ্গে। পৃথিবীতে যারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে অথবা তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানব হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে তাদের জীবন পৃথিবীতে স্থায়ী। তাদের মধ্যে নবী-রাসুল, জ্ঞানী-গুণী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও মনীষীদের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা মরেও পৃথিবীতে অমর।

আর যাদের অপকর্মে মানুষ নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত, মানুষের মাঝে তারা বেঁচে থাকবে ঘৃণার পাত্র হিসেবে। পরবর্তী প্রজন্ম তাদেরকে কোন অপকর্মের সঙ্গে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে। মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও যুগ যুগ ধরে তারা বেঁচে থাকবে তাদের নিজ কর্মের মাধ্যমে।

ক্ষণস্থায়ী এই মানব জীবনে আল্লাহর নির্দেশিত পথে যারা জীবনকে অতিবাহিত করেছেন, আখেরাতে আল্লাহর আরশের সামনে বিচারে তারা সম্মানিত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে আল্লাহর বিধি-নিষেধকে অমান্য করে পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব-কলহ ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে মানুষকে অশান্তিতে রাখবে, তারা আখিরাতে কঠিন বিচারের সম্মুখীন হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আখিরাত শব্দের অর্থ হলো পরকালীন জীবন। মৃত্যুর পর যে অনন্ত অসীম সময় ধরে মানুষ দুনিয়ার কর্মের ফল লাভ করবে তাকে আখেরাত বলে। আর কেয়ামত শব্দের অর্থ ওঠা, পুনরুত্থান বা দন্ডায়মান। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত নিকৃষ্টতম মানুষের উপর কায়েম হবে’।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যতক্ষণ একটা লোক ও থাকবে যে আল্লাহ বলবে ততক্ষণ কেয়ামত কায়েম হবে না’। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, কেয়ামতের পূর্বে আল্লাহর নির্দেশে সিরিয়ার দিক থেকে একটি হিমেল বাতাস প্রবাহিত হবে, যে বাতাস মুসলমানদের শরীরে স্পর্শ করতে তারা মারা যাবে। তারপর বেঁচে থাকবে কেবল নিকৃষ্ট লোকেরা। আর তারা মানুষ হত্যা ও রক্ত প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে হবে হিংস্র প্রাণীদের মত। তারা এতটা নির্লজ্জ হবে যে মানুষের সামনে পরস্পর ব্যভিচারে লিপ্ত হবে এবং তারা হবে কেয়ামতের শিকার।

মহররমের ১০ তারিখ জুম্মার দিন। মহান আল্লাহর নির্দেশে যখন হজরত ইসরাফিল আলাইহিস সাল্লাম সিংগায় প্রথম ফুঁক দেবেন, তখন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু মারা যাবে। আকাশ ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্র ইত্যাদি আসমান থেকে ছিটকে পড়বে। পাহাড়সমূহ তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে এবং সৃষ্টি জগতের সবকিছু ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেছেন, ‘সেদিন এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু বাকি থাকবে তোমার রবের সত্তা, যিনি মহিমান্বিত ও সম্মানিত।’

আসুন, আমরা ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যেয়ে পরস্পরকে আপনভাবে গ্রহণ করি। সবাইকে ক্ষমা করে দেই। নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা বোধ করি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অবলম্বন করে পৃথিবীকে শান্তি ও সুখের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলি এবং পরকালের জীবনকে জান্নাতবাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি। আমিন।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সমাজকর্ম বিভাগ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার