Logo
Logo
×

মতামত

নিউ ইয়র্কের মেয়র মামদানি কতটুকু মুসলমান?

Icon

এম এল গনি

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১২ এএম

নিউ ইয়র্কের মেয়র মামদানি কতটুকু মুসলমান?

আমাদের বর্তমান নিবাস কানাডার এডমন্টন শহরে আমরা এসেছি প্রায় ১৮ বছর আগে। অন্য দশজন মুসলমানের মতো আমিও হালাল মাংসের দোকান খুঁজে পাবার চেষ্টা করি সে সময় নতুন আসা এ শহরে। অবশেষে একটা দোকান পেয়েও যাই। সেখান থেকে হালাল মাংস কিনি নিয়মিত। এভাবেই চলছিল বেশ। বছরখানেক পর এক ধার্মিক বাংলাদেশি ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হলে আমার সেই হালাল মাংসের দোকানের কথা শুনে তিনি আস্তাগফিরুল্লাহ বলে দাঁতের ফালিতে জিহ্বা কেটে বললেন, 'গনি ভাই, আপনি তো ভুল করছেন; জানেন না, ওই দোকানের মালিক আসলে মুসলমান না!'

— না তো, আমি তো শুনেছি ওরা মুসলমান, অবাক হয়ে আমি জবাব দিলাম।

— আরে ভাই, নামে মুসলমান, আসল মুসলমান না, ওরা আসলে শিয়া।

— শিয়ারা মুসলমান না?

— কি যে বলেন, ইসলামের এই বেসিক জিনিসটাও আপনি জানেন না?

— তাহলে এখন কি করি?

— সমস্যা নেই, আপনাকে বাংলাদেশী সুন্নি মুসলমানের এক দোকানের ঠিকানা দিচ্ছি। ওদের কাছে আসল হালাল মাংস পাবেন।

হালালেও আবার আসল-নকল? কিঞ্চিৎ অবাকই হলাম।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, এই মুমিন মুসলমান স্বদেশীর সঙ্গে দেখা হতে আমার এতদিন লাগল কেন? 'ভেজাল হালাল' খেয়ে ইতোমধ্যেই অনেক গুনাহ হয়ে গেছে নিশ্চয়ই।

যাক, কয়েকদিন পর সেই দোকানে গিয়ে কয়েক পাউন্ড 'আসল হালাল' খাসির মাংস কিনে আনি।

খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের বড় ছেলে সাঈদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় অতিপ্রখর। গন্ধ শুঁকে সে তার মাকে বললো, 'মা, আব্বু যে খাসির মাংস এনেছে তার গন্ধটা একটু অন্যরকম।'

অতঃপর আমার স্ত্রী, হালিমা আফরিন, নিজেও নাকের কাছে নিয়ে নিশ্চিত করল এটা আসলে খাসি নয়, ভেড়ার মাংস। কেবল তাই নয়, হাড়ের ভিড়ে সেখানে মাংস খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর ছিল। বলা চলে, আশিভাগই হাড্ডি।

স্ত্রীকে দেশি ভাইয়ের পরামর্শের কাহিনি খুলে বলার পর সব শুনে সে আমাকে আবার আগের দোকান থেকেই মাংস কেনার পরামর্শ দিল। সেই থেকে আজও ওই দোকানের সঙ্গেই আছি, যদিও তারা সেই দেশি ভাইয়ের ভাষায় 'প্রকৃত মুসলমান' নন।

ব্যক্তিগত জীবনাচারের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও সততা বজায় রাখা মুসলমানদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে আমলে আরবের অশিক্ষিত ও বর্বর জনগোষ্ঠীর মাঝে হজরত মুহম্মদ (স.) ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁর প্রশ্নাতীত সততা ও সত্যবাদিতার কারণেই। এ বিশেষ গুণের জন্য মুহম্মদ (স.)-কে তাঁর চরম শত্রুরাও বিশ্বাস করতেন, এবং প্রয়োজনে, তাঁর কাছে ধনদৌলত ও মূল্যবান সামগ্রী গচ্ছিত রাখতেন। এটাই ইসলামের শিক্ষা।

উল্লেখ্য, শিয়া এবং সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ই ইসলামের মৌলিক নীতি, যেমন, তাওহিদ (একত্ববাদ), নবুয়াত এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ, সুন্নিদের সঙ্গে শিয়াদের কিছু ধর্মীয় ব্যাখ্যা বা আইনগত মতপার্থক্য থাকলেও তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে অভিন্ন মত পোষণ করে। উপরের উদাহরণের সুন্নি ব্যবসায়ীর কাছে সততার পরিচয় আমি পাইনি, যা পেয়েছিলাম ওই শিয়া ব্যবসায়ীর কাছে। ইসলামের শিক্ষা বা নির্দেশনা বিবেচনায় এবার বোদ্ধা পাঠকই বিচার করুন তুলনামূলকভাবে এদের কে বেশি মুসলমান?

দুই.

বাঙালির মন ঐতিহাসিকভাবেই বড়ো কৌতূহলী। তারা নিজেরা কতখানি ধার্মিক, বা যথাযথভাবে নিজ ধর্ম পালন করে কিনা তার খোঁজ না রাখলেও সুদূর আমেরিকায় বসবাসরত জোহরান মামদানি, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র, একজন সাচ্চা মুসলমান কিনা তা তাদের জানা একান্ত জরুরি। বেশ কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলেছে। এখনো তা থেমে যায়নি। একপক্ষের দাবি তিনি প্রকৃতই একজন মুসলমান, অপরপক্ষ তাঁকে মুসলমান মানতে নারাজ। এ বিষয়টি নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করার প্রয়াস থাকছে এ লেখায়।

মামদানির ধর্মবিশ্বাস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মূলে ধর্মীয় ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও। অমুসলিম প্রমাণে সমালোচকদের কেউ বলছেন মামদানি শিয়া এবং তাদের ভাষায়, শিয়ারা মুসলমান নয়; কেউ বলছে তাঁর জন্মদাত্রী মা একজন অমুসলিম, তিনি মুসলমান হন কিভাবে?; তাঁর স্ত্রী খ্রিস্টানের মতো চলাফেরা করেন বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করছেন; এছাড়া, মামদানি খাবার গ্রহণে হালাল-হারাম বাছবিচার করেন না, বা তিনি ইসলামে নিষিদ্ধ মদও পান করেন বলে অনেকে অভিযোগ তুলছেন। এভাবে নানামুখী অভিযোগে শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত জোহরান মামদানির মুসলমানিত্ব খারিজ করে দিতে চাইছেন অনেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দরিদ্র, ছিন্নমূল ও নির্যাতিতের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করা তরুণ জোহরান মামদানি। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র, এবং বিগত ১০০ বছরের মধ্যে কনিষ্ঠতম মেয়র; যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র তো বটেই। তাঁকে হারাতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিলিয়নেয়ার একযোগে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন খ্রিস্টান-ইহুদি ভোটারদের তার বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে। ফল হিতে বিপীত হয়েছে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি, বিশ লাখেরও অধিক, ভোটদাতা এবারের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু, তারপরও তারা মামদানির বিজয় ঠেকাতে পারেননি। কার্যত ইহুদিদের অনেকেই মামদানিকে ভোট দিয়েছেন। খ্রিস্টানদের ভোট তো পেয়েছেনই।

খ্যাতনামা ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা আমেরিকা প্রবাসী মীরা নায়ার তার মা, আর, উগান্ডা হতে আমেরিকায় আসা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক মাহমুদ মামদানি তার বাবা। মাহমুদ মামদানির জন্ম ভারতের গুজরাটে। অর্থাৎ, তিনি একজন গুজরাটি মুসলমান। রামা দুয়াজি মামদানির স্ত্রী। তিনি সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান মুসলমান। একজন চিত্রশিল্পী। তাঁর পিতামাতাও জোহরান মামদানির পিতামাতার মতো উচ্চশিক্ষিত আধুনিক মনের মানুষ।

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদী, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে গুজরাটে মুসলমানদের ওপর যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সহিংসতা ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তাতে তার ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন জোহরান মামদানি। ২০২০ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে হিন্দু মন্দির স্থাপনের প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে আমেরিকার টাইমস স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছিলেন জোহরান। সে সময়ের এক সাক্ষাৎকারে তিনি মোদীকে যুদ্ধাপরাধী বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। প্রতিবাদের ঝড়ে মোদীর ভিসাও বাতিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপির সঙ্গে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা মানবাধিকারের প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী সরব, তাদের দ্বন্দ্বও উত্তাপ ছড়িয়েছে মামদানির বিজয়ে। বোধগম্য কারণেই, মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের মেয়র নির্বাচিত হন তা মোদী সরকার এবং একই সঙ্গে, পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিজেপি—ভাবধারার সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু)-রা চাননি। এ অবস্থায়, মামদানির বিজয় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন তিনি প্রকৃত মুসলমান নন প্রমাণের অপচেষ্টায় মাঠে নেমেছেন, যা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

তিন.

দীর্ঘকাল ব্যাপী আমেরিকা জুড়ে চলমান মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাবকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন, মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য ফেডারেল বরাদ্দ কমিয়ে দেবেন। এছাড়া, যেসব ইহুদি মামদানিকে ভোট দেবে তাদেরকে স্টুপিডও আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, মামদানির আমেরিকার নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেবার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

গাজায় ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মামদানি। ঠোঁটকাটা ডেমোক্রেট নেতা মামদানির স্পষ্টবাদিতা এবং একই সঙ্গে, মোদী-বিরোধিতা কেবল ট্রাম্পপন্থীদের নয়, বিশ্বব্যাপী কট্টরপন্থী হিন্দুদেরও চোখের কাঁটায় পরিণত করেছিল মামদানিকে।

মামদানির বিজয় সারা বিশ্বে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। এ উত্তাপ আমেরিকার গণ্ডি পেরিয়ে ভারত-বাংলাদেশেও পৌঁছেছে। ভারতে মানবাধিকারের দাবিতে এতদিন যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন মামদানির বিজয় উল্লাসে তারা নেমেছেন রাস্তায়, কিন্তু, মোদী বা বিজেপি নেতারা পালন করছেন অস্বাভাবিক নীরবতা। মোদী সরকার এখনো দ্বিধায় রয়েছে তারা নিউ ইয়র্ক মেয়রের বিজয়ে অভিনন্দন জানাবে কিনা। অপরদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, শশী থারুরসহ ভারতের বিরোধী নেতারা দেরি না করে মামদানিকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, যেখানে একজন সংখ্যালঘু মুসলমান নিউ ইয়র্ক শহরের মতো বিশ্বের নামিদামি শহরের নেতৃত্বে, সেখানে ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও কোন মুসলমান উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বে না থাকা মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি মোদী সরকারের বৈরী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। এ অর্থে, ধর্মীয় বিভাজনের বিপরীতে মামদানির কণ্ঠ আজ সারা বিশ্বে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করেছেন, বিশ্বের কোথাও না কোথাও এখনো ধর্ম নয়, যোগ্যতাই নেতৃত্বের আসন নির্ধারণ করে।

চার.

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক হোসাইন ওবামার ক্ষেত্রেও তার ধর্ম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাঁর পিতা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হবার কারণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সে সময়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ওবামাকেও মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু, তিনি নিজেকে একজন প্র্যাকটিসিং খ্রিস্টান দাবি করায় প্রতিপক্ষ তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ওবামার মতো মামদানির বাবা মুসলমান হলেও মা অমুসলিম। তাই, ভোটের হিসাব বিবেচনায় তিনি চাইলে তাঁর মুসলমান পরিচয় হতে সরে আসতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে তিনি বরং জোরালোভাবেই নিজেকে মুসলমান বলে প্রচার করেছেন। তারপরও নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানিকে ভোট দিয়ে তাঁদের মেয়র নির্বাচিত করেছেন। মামদানির ধর্ম পরিচয়ের সঙ্গে ওবামার ধর্ম পরিচয়ের ব্যতিক্রম এখানেই।

বারাক ওবামা এবং জোহরান মামদানির দুটি নির্বাচন পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয় যে নিউ ইয়র্কের জনগণ কে মুসলিম, কে ইহুদি, কে খ্রিস্টান, অর্থাৎ, ধর্ম পরিচয়ে গুরুত্ব দেননি তাদের নেতা নির্বাচনে। ধর্ম পরিচয়ের ঊর্ধে গিয়ে তারা যোগ্যতর প্রার্থীকে নেতা বানিয়ে সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, তরুণ মামদানি তার জীবনের শুরু হতেই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি তার অন্তরের টান ও দরদ দেখিয়েছেন। নিউ ইয়র্কবাসী দেখেছে দরিদ্র ও ছিন্নমূলদের অধিকার আদায়ে তাঁকে মাঠে লড়তে, তারা দেখেছেন ট্যাক্সি ড্রাইভারদের দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাকে দিনের পর দিন অনশন পালন করতে। এমন অসংখ্য জনবান্ধব কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরেই নিউ ইয়র্কের মানুষ তাকে পরম বন্ধুর মতো পাশে পেয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থনপুষ্ট শক্তিশালী প্রার্থী এন্ড্রু কুওমোকে কুপোকাৎ করে নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র পদ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন ৩৪ বছরের মামদানি।

পাঁচ.

মামদানি যে আদতেই একজন মুসলমান নন সে দাবি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজেকে বাংলাদেশি-আমেরিকান দাবি করা শৈবাল নামের একজন তার ফেইসবুক পোস্টে প্রশ্ন করেছেন: মুসলমান হয়ে থাকলে মামদানি বে-হালাল খাবার ভক্ষণ ও মদ্যপান করেন কিভাবে? মামদানির মা অমুসলিম হলে তাকে কি আদৌ মুসলিম বলা চলে? তাঁর স্ত্রী কি মুসলমানের মত চলাফেরা করেন? তিনি আরো যোগ করেন, বাংলাদেশে যেমন ভোটের রাজনীতিতে মুসলমানদের টানতে নির্বাচনের আগেআগে অনেকে ধার্মিক মুসলমানের ভান ধরেন, মামদানিও ভোট জিততে তেমন অভিনয় করছেন।

শৈবাল বাবুর প্রশ্নগুলো ভিত্তিহীন হলেও অনেকের মনে এ জাতীয় প্রশ্ন উঁকি দেয় বিধায় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখার প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে।

প্রথমত, মামদানি আদৌ বেহালাল খাবার গ্রহণ বা মদ্যপান করেন কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই; তবে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে তিনি তা করেন, তাহলেও কি তাকে অমুসলিম দাবি করা যায়? তাবৎ দুনিয়ায় মামদানিই কি একমাত্র মুসলমান যিনি এ কাজগুলো করে থাকেন? তাঁর মা অমুসলিম হয়ে থাকলে মামদানিকেও অমুসলিম হতে হবে এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য কি? মামদানির স্ত্রী একজন প্রাপ্তবয়স্ক, উচ্চ শিক্ষিত ও স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। পাশ্চাত্যের বেশভূষায় আধুনিক জীবনযাপন করা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ। এতে তাঁর স্বামী, অর্থাৎ, মামদানির মুসলমানিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে কোন বিবেচনায়? তাছাড়া, প্রায় নব্বই শতাংশ অমুসলিমের শহর নিউ ইয়র্কে ভোটপ্রার্থী নিজেকে মুসলমান দাবি করলে তাঁর ভোট কি বেড়ে যেতে পারে, না কমার কথা?

আমি নিজেও একজন অভিবাসী হবার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কানাডা বা আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক নতুন অভিবাসী নিজেদের ধর্ম-বর্ণ পরিচয় গোপন করার চেষ্টা চালান। অনেকে নিজেদের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেন, যেমন, সামসু হয়ে যায় স্যাম, নিখিল হয়ে যায় নিক, ইত্যাদি। এমন পরিবেশে শৈশবে উগান্ডা থেকে আমেরিকায় আসা অভিবাসী মামদানি তারুণ্যে এসে চাইলেই তাঁর নাম-পরিচয় বিকৃত বা গোপন করে ও ধর্ম বিসর্জন দিয়ে আমেরিকার মূলধারার তরুণদের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় নিউ ইয়র্ক সিটির মতো খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরেও নিজেকে একজন মুসলমান দাবি করে চলেছেন। সম্প্রতি নির্বাচনের পরও মসজিদভর্তি মুসল্লিদের সঙ্গে তাঁকে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এতকিছুর পরও জোহরান মামদানির মুসলমানত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা তাঁর ধর্মীয় পরিচয় নির্ধারণে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয় কি?

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার