বাংলাদেশের নাগরিকই নয়, ব্যক্তিদেরও রাজউকের প্লট সংরক্ষিত কোটায়
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৮ এএম
জন্মসূত্রে বিদেশি নাগরিক, বাংলাদেশের নাগরিক নয়। জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই- এমন ব্যক্তিদেরও সংরক্ষিত কোটায় রাজউকের প্লট দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বরাদ্দপ্রাপকের নাম উল্লেখ আছে, আর কোনো তথ্য নেই। পরিচয় বা ঠিকানা কিছুই নেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন বা নির্দেশনায়। প্রবাসে থাকা এবং বিদেশে নাগরিকত্ব অর্জন করা এসব ব্যক্তির কারোই জাতীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই। তারপরও সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা সরকারি প্লট বরাদ্দে ভয়াবহ অনিয়মের নজির বহন করে।
দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আদৌ বাংলাদেশের কিনা এটাও খতিয়ে দেখা হয়নি। শুধুমাত্র গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করেই রাজউক প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। অনুশাসনে নাম, পিতার নাম ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ নেই। জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও উল্লেখ নেই। তারপরও রাজউকের বোর্ডসভায় এসব ব্যক্তির নামে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ রকমের ব্যাপক গুরুতর অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে রাজউকের প্লট বরাদ্দে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা তদন্তের জন্য গত ২৯ মে এই কমিটি গঠিত হয়। প্রশাসনের সাবেক গ্রেড-১ ভুক্ত কর্মকর্তা মহ: মনিরুজ্জামান- এর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তিনশ’ প্লটের অনিয়ম উদঘাটন করেছে। প্রতি ধাপে একশ’ করে তিনশ’ প্লটের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় এবং হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সংরক্ষিত কোটায় প্রায় ৯৪২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এগুলো তদন্তের দায়িত্ব পড়েছে কমিটির ওপর। এরপরে রাজউকের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত অন্যান্য অনিয়মও তদন্ত করবে এই কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া শরীফ আহমদ, পিতা- মো. নুরুল হক সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তাঁর বর্তমান ঠিকানা: Plot 1,95 Durward Street, London E. 1.5BZ. তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশি নাগরিক কিনা এ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র নেই। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তির সময় আবেদনও করেননি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৬৬৭, তারিখ: ৩১/১০/২০১১ মূলে কর্তৃপক্ষের ১১/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে শুধুমাত্র বরাদ্দ গ্রহীতার নাম ও পিতার নাম উল্লেখ রয়েছে। তার পেশা বা কোনো পরিচয় উল্লেখ নেই। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
মো. শাহেদ হোসেন, পিতা- মো. মোদাচ্ছির হোসেন স্থায়ীভাবে বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। রাজউকের কাগজপত্রে তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দেওয়া আছে- 14 Chevlotte. SQ Richmond. Surrey, TW10- 6JE. UK. প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ৪৮৯ নং স্মারক, তারিখ-০৫/০৮/২০১২ এ জারিকৃত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজউকের ০২/২০১৩ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে শুধুমাত্র নাম ও পিতার নাম উল্লেখ রয়েছে। কোনো ঠিকানা, প্রকল্পের নাম এবং প্লটের আয়তন উল্লেখ নেই। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
আলেয়া কামাল, স্বামী- মোস্তফা কামাল, পিতা- আব্দুস সোবহান মোল্লা। তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁর বর্তমান ঠিকানা হলো- North Edgely Ave.. Scarborough. Ontario, Mik 115, Canada. আলেয়া কামাল পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে আবেদনও করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৪৮৯, তারিখ: ০৫/০৮/২০১২ এবং ৫১ নং স্মারক, তারিখ: ২২/০১/২০১৩ এর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজউকের ০২/২০১৩ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৩ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে শুধুমাত্র বরাদ্দ গ্রহীতার নাম এবং স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তার কোনো ঠিকানা বা পরিচয় উল্লেখ নেই। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
মিসেস আফসানা ইউসুফ, পিতা- আমিনুর রহমান ইউসুফ, স্বামী মোঃ আব্দুল হাই মিয়া। তিনি সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগও নেই, যদিও দাবি করা হয়েছে তিনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত সময়ে আবেদনও করেননি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৫২০, তারিখ: ১৮/০৭/২০১৩ এর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে রাজউকের ০৭/২০১৩ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বরাদ্দ গ্রহীতার বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। নথিদৃষ্টে দেখা যায়, তিনি সিংগাপুরের নাগরিক। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের একই অনুশাসনের মাধ্যমে ২ বোন (আফসানা ইউসুফ ও রিজওয়ানা ইউসুফ)কে আলাদাভাবে ২টি ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাদেরকে এভাবে সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
মো. বাবুল হোসেন ভুঞা, পিতা- বাসু ভুঞা, বেলজিয়ামে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং সেখানকার নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তবে রাজউকের কাগজপত্রে দেখানো হয়েছে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ক্যাটেগরিতে প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে আবেদন করে প্লট বরাদ্দ পায়নি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হিসেবে তাকে দেখানো হলেও তার অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আসে কিনা এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণাদি নেই। জাতীয় পর্যায়ে তার উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই, যদিও সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই যোগ্যতা থাকাটা অপরিহার্য। তারপরও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ২৩/০৮/২০১১ তারিখের ৫১২ নং স্মারকের নির্দেশনায় রাজউকের ০৮/২০১১ তম বোর্ড সভায় ৫ কাঠার একটি প্লটের বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মন্ত্রণালয়ের পত্রে আয়তন উল্লেখ ছিল না। পরে হাতে লেখা হয়েছে।
এ কে এম মতিউর রহমান, পিতা- মো. আব্দুল খালেক চোপদার, গ্রাম-ঝিকরহাটি, পো. ঘাটমাঝি, থানা ও জেলা- মাদারীপুর। তিনি বিদেশে বসবাস করেন। এ কে এম মতিউর রহমানেরও বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। জাতীয় পর্যায়ে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই। তারপরও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৭২০, তারিখ: ০১/১২/২০১১ এর অনুশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউকের ১৩/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৭.৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা বরাদ্দ বিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। কাওসার আহমদ চৌধুরী, পিতা- মৃত মোকাদ্দাস আলী চৌধুরী। তিনি যুক্তরাজ্য স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কাওসার আহমেদের বর্তমান ঠিকানা হলো-13. Radcliffe Road Harrwo Weald. Middlesex. HАЗ 70A UK.তিনি বর্তমানে বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিক কিনা এই মর্মে জাতীয় পরিচয় পত্রও নেই। সংরক্ষিত কোটায় প্লট প্রাপ্তির যোগ্যতা তো নেই-ই। তারপরও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৫৭৪, তারিখ: ২২/০৯/২০১১ এর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজউকের ০৯/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে।
মো. হাসিনুজ্জামান, পিতা- ওয়ারেস আলী। বর্তমান ঠিকানা: 7, Ingl Road. Pliastow, London, E138HY. তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক হিসেবে রাজউকের নখিতে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র নেই। তিনি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে আবেদনও করেননি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ৬২৪ নং স্মারক, তারিখ: ১৮/১০/২০১১ এর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে রাজউকের ১১/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে বরাদ্দ গ্রহীতার নাম ও পিতার নাম এবং যুক্তরাজ্যের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। সাময়িক বরাদ্দপত্রেও যুক্তরাজ্যের ঠিকানা রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে কোন অবদানের জন্য যুক্তরাজ্য নিবাসীকে সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
আব্দুর রব, পিতা- মো. শামসুল আলম সরদার, ইতালী প্রবাসী। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৫১২, তারিখ: ২৩/০৮/২০১১ এর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে রাজউকের ০৮/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে শুধুমাত্র বরাদ্দ গ্রহীতার নাম ও পিতার নাম উল্লেখ রয়েছে। প্লটের আয়তন হাতে লেখা রয়েছে। রাজউকের অন্যান্য প্রকল্প কিংবা অন্য কোন সরকারী বা আধাসরকারী সংস্থা থেকে তাকে এভাবে বিধিমালা লঙ্ঘন করে আরও প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা তা যাচাই হওয়া প্রয়োজন বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ. এফ. মো. রেজা, পিতা- মৃত আবু ইউসুফ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানকার নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই মো. রেজার। তার বর্তমান ঠিকানা: 170-49 CEDAR CROFT RD APT-31. JAMAICA, NY. USA.মো. রেজা ইতিপূর্বে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরিতে প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করে প্লট বরাদ্দ পাননি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ২২৯, তারিখ: ২১/০৩/২০১২ এর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজউকের ০৪/২০১২ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তিনি ইতিপূর্বে বিজ্ঞপ্তির সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করলেও রাজউকের নথিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদের কপি পাওয়া যায়নি। এভাবে বরাদ্দ বিধি লঙ্ঘন করে মো. রেজা অন্য কোনো সরকারি বা আধাসরকারি প্লট নিয়েছেন কিনা এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
ফায়েজ আসিফ খাঁন, পিতা- অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ খাঁন। এই ব্যক্তিরও জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তিনি যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এবং সেখানকার নাগরিক। বিধিমালা অনুযায়ী সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৮৩, তারিখ: ২৭/০৬/২০১১ এর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজউকের ০৬/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় প্লট দেয়া হয় তাকে।
বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ক্যাটাগরিতে ৭.৫ কাঠা প্লটের জন্য আবেদন করে প্লট বরাদ্দ পাননি মহিন উদ্দিন, পিতা- মৃত মোফাজল আহমেদ। অবাক ব্যাপার হলো, তিনি নিজেকে এদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি হিসেবে দাবি করলেও তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক কিনা এ প্রমাণও নেই। তারপরও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৩১৮, তারিখ: ৩০/০৪/২০১২ অনুশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউকের ০৫/২০১২ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠা প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নর্থিপত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসনে বরাদ্দ গ্রহীতার শুধুমাত্র নাম আছে। পিতার নাম বা কোনো ঠিকানা-পরিচয়ও উল্লেখ নেই। প্লটের ১ম কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বাকী অর্থ তিনি পরিশোধ করেননি। এ জন্য প্লটটির রেজিস্ট্রেশন হয়নি। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
মাহবুব আহমেদ, পিতা- মৃত সরকুম আলী। তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন রাধুনী(Cook)। মাহবুব আহমেদ যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এবং সেখানকার নাগরিক। ঠিকানা- 516 samuel lewis trust. Liverpool Road. London, NI ILW UK.বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই মাহবুব আহমেদের। তারপরও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৫৭৪, তারিখ: ২২/০৯/২০১১ এর নির্দেশনায় রাজউকের ০৯/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় পর্যায়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের পত্রে বা নথিতে উল্লেখ নেই।
এমদাদ আহমেদ, পিতা- মৃত আলহাজ্ব আব্দুল গনি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারও। এমদাদ আহমেদের আবেদন মতে তিনি একজন বৃটিশ-বাংলাদেশী। বর্তমান ঠিকানা: 23 Lynn Road ILFORD. Essex. IG2 7DU. UK.বরাদ্দ গ্রহীতা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে আবেদনও করেননি। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৬২৪, তারিখ: ১৮/১০/২০১১ এর অনুশাসন মোতাবেক রাজউকের ১১/২০১১ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, রাজউকের সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া এই ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিদেশের নাগরিক। কেউ কেউ জন্মসূত্রেই বিদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিক কিনা এ ব্যাপারে জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই। জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদানও নেই এদের কারোই। এমনকি মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন বা নির্দেশনায় ঠিকানা-পরিচয়ও নেই। শুধুমাত্র নাম-পিতার নাম উল্লেখ আছে। এ রকমের ভয়াবহ অনিয়মের মধ্য দিয়েই রাজউকের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পদ্ধতি, ২০০৯ ও নভেম্বর ২০০৮ তারিখে প্রকাশিত প্রসপেক্টাস এবং RAJUK (Allotment of Lands 1, 1969) এর ১৩/এ বিধি অনুসরণ করা হয়নি।