অবশেষে চূড়ান্ত মনোনয়নে পরিবর্তন আসছে বিএনপির
প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে ১৩-১৭টি আসনে
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২০ এএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ২৭২টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। প্রথম দফায় ২৩৭টি ও এবং দ্বিতীয় দফায় ৩৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে দলটি। এই প্রার্থীদের মধ্যে পরিবর্তন আসছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত শরিকদের সঙ্গে এখনও আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি। সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি আসনে পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত মিলেছে।
গত কয়েক দিনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, শহীদ উদ্দিন স্বপনসহ বেশ কয়েকটি আসন এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করতে চান। এই আসনে বিএনপির মির্জা আব্বাস প্রার্থী থাকায় ঢাকা-১২-তে নির্বাচনে আগ্রহী তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে সাইফুল হক বলেন, ‘আজ রাতে আমাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আগামী শনিবার বৈঠকটি গুলশান বিএনপির কার্যালয়ে হবে। আমরা আলোচনা করছি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বেরিয়ে আসবে।’
সাইফুল হকের টার্গেট এখন ঢাকা-১২ আসন, যেখানে বিএনপির সাইফুল আলম নীরব প্রার্থী হিসেবে মনোনীত। এই আসনটি নিয়েও বিএনপির নেতাদের বিবেচনা রয়েছে। তবে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কাছে উল্লেখ করেন, সাইফুল আলম নীরবের বিরুদ্ধে চারশ’র বেশি মামলা ছিল। জেল খেটেছেন, তাকে মনোনয়ন না দিলে কীভাবে সম্ভব।
যদিও অন্য একজন নেতার ভাষ্য, রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে সাইফুল আলমকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে তেজগাঁও-কাওরান বাজার এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সাইফুল হক পুরো আওয়ামী লীগের রেজিমের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেছেন।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির গুলশান অফিসে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতাদের আলাপেও এই বিষয়গুলো ছিল। বিশেষ করে যুগপতে যুক্ত নেতাদের আসন নিশ্চিত করা না গেলে তাদের সম্ভাব্য কেবিনেটে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও আসে নেতাদের আলাপে।
তবে সাইফুল হক জানিয়েছেন, আগে নির্বাচনের বিষয়টি ফায়সালা করা প্রয়োজন। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আগামী দিনের যাত্রায়ও তাকে এবং তার দলকে লাগবে বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদাও জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্দোলন করেছেন একসঙ্গে, নির্বাচনের সময়ও এখন একসঙ্গেই থাকা দরকার।’
নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি একেএম আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা সমন্বিত নির্বাচনি প্রক্রিয়ার পক্ষে। অনেকেই হয়তো মনোনয়ন পাবেন না, কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ আমলে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আশা করি, শনিবার একটা সমাধান আসবে।’
ইতোমধ্যে আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টির শীর্ষ নেতাদের আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার বৈঠক করবে বিএনপি।
তবে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বিএনপির বাইরে সর্বোচ্চ ২৫টি আসন যুগপৎ শরিকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। বিএনপি কোনোভাবেই দলীয় প্রতীকের বাইরে রিস্ক নিতে অনাগ্রহী।
ইতোমধ্যে ২৭২টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা ইতোমধ্যে দুইবারে তালিকা দিয়েছেন। এখন চূড়ান্ত তালিকা দেওয়া হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা জানান, ঘোষিত তালিকার মধ্যে অন্তত ১৩-১৭টি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। ইতোমধ্যে নানাপক্ষের অভিযোগ্য, সত্যতা নিশ্চিত করে এবং যুগপৎ রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে সমমনাদের সমর্থন দেওয়ার কারণে ২৫টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে পারে বিএনপি।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন। এ ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
তবে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম একজন নেতা জানান, আসন বণ্টনে জটিলতা তৈরি পারে। এমনকি গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন দেখা দিতে পারে এই নিয়ে। এছাড়া বিএনপির সমমনারাও বিরোধী অবস্থান নিতে পারেন। বিশেষ করে জামায়াতের পক্ষ থেকে একটি তৎপরতা রয়েছে, যত সম্ভব দলকে একত্রিত করে মৌন সমর্থনভিত্তিক নির্বাচনি সমঝোতা করতে। ইতোমধ্যে সাবেক বিএনপি-জোটের একটি দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জামায়াত।’