১১ বছর আগের সেই ছোট্ট জিহাদের মতই করুণ পরিণতি হলো সাজিদের
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০২ পিএম
সবার হয়তো মনে আছে ২০১৪ সালে ঢাকার শাহজাহানপুরে পানির কূপে আটকে পড়া চারবছরের শিশু জিহাদ। ২৩ ঘন্টা ধরে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চলে।কূপের ভেতর জিহাদের সন্ধান না পেয়ে এক পর্যায়ে দমকল বাহিনী হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু দমকল বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার পর স্থানীয়রা স্ব-উদ্যোগে সেখানে শিশুটিকে বের করার জন্য তৎপরতা শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজ স্থগিত ঘোষণা করার পাঁচ মিনিট পরই নাটকীয়ভাবে উদ্ধার হয় জিহাদ। এরপর শিশু জিহাদকে মৃত ঘোষণা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কে এম নিয়াজ মোর্শেদ।
এই ঘটনার ঠিক ১১ বছর পর একই ভাবে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে ছোট্ট শিশু সাজিদ। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে নলকূপের জন্য খনন করা গর্তে শিশু পড়ে যায়। শিশুটিকে উদ্ধারে কয়েক দফা নলকূপের গর্তে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ক্যামেরা নামায়। কিন্তু গর্তের ভেতরে ওপর থেকে পড়া মাটি ও খড়ের কারণে শিশুটিকে তারা শনাক্ত করতে পারেনি।
অবশেষে টানা ৩২ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকা শিশু সাজিদকে খুঁজে পাওয়া যায় বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ২ মিনিটে। উদ্ধারের পর শিশু সাজিদকে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে হয়। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, সাজিদ তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির পাশের একটি জমি পার হচ্ছিল। জমিটি খড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সাজিদের মা জানতেন না যে খড়ের নিচেই রয়েছে একটি অরক্ষিত গভীর নলকূপের গর্ত। হাঁটার সময় হঠাৎ সাজিদ গর্তে পড়ে যায়। পেছন থেকে ‘মা মা’ চিৎকার শুনে মা ফিরে দেখেন সাজিদ নেই। খড় সরাতেই বেরিয়ে আসে মৃত্যুকূপ।
নিখোঁজ শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, দুপুর একটার দিকে মেজ ছেলে সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশে মাঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার ছোট একটি সন্তান কোলে ছিল। হাঁটার সময় হঠাৎ সাজিদ মা বলে ডেকে ওঠে। তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখেন, ছেলে নেই, গর্তের ভেতর থেকে ‘মা, মা’ বলে ডাকছে। গর্তটির ওপরে খড় বিছানো ছিল। ওখানে যে গর্ত ছিল, সেটা তিনিও বুঝতে পারেননি, ছেলেও। ওই জায়গায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে গর্তের ভেতর পড়ে গেছে। লোকজনকে ডাকতে ডাকতেই ছেলে গর্তের নিচে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত বছর স্থানীয় এক ব্যক্তি এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ১২০ ফুট নিচেও পানি না পাওয়ায় পাইপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মুখ খোলা রেখেই ফেলে রাখা হয়। গত বছরের বৃষ্টিতে গর্তটির মুখ আরও বড় হয়। কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বা ঢাকনা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।