Logo
Logo
×

জাতীয়

মা-মেয়ে খুন : পরপর দুদিন চুরি করে ধরা পড়েছিল গৃহকর্মী আয়েশা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৬ এএম

মা-মেয়ে খুন : পরপর দুদিন চুরি করে ধরা পড়েছিল গৃহকর্মী আয়েশা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় মা-মেয়েকে হত্যার আগের দিন সেখান থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করেছিল গৃহকর্মী আয়েশা। গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ বিষয়টি টের পান। এ জন্য ঘটনার দিন আয়েশাকে চোখে চোখে রেখেছিলেন তিনি। সেদিন যখন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গৃহকর্মী বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়, তখন তিনি তাকে ধরে ফেলেন। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আয়েশা তাঁকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে বসে। এ দৃশ্য দেখে লায়লার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। 

বুধবার ঝালকাঠির নলছিটি থেকে মোছা. আয়েশা ও তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা সমকালকে বলেন, হত্যার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে চুরির বিষয়টিই সামনে এসেছে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে। 

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা দাবি করে, চুরির পরিকল্পনা নিয়ে সে ওই বাসায় ঢুকলেও হত্যার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে সে নিজের বাসা থেকে সুইচ গিয়ার চাকু সঙ্গে নিয়ে যায়। হত্যায় ব্যবহৃত অপর ছুরিটি ওই বাসাতেই ছিল। মা-মেয়েকে ছুরিকাঘাতের পর সে আসাদগেট হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিজের বাসায় যায়। পরে রাতে সেখান থেকে যায় একই এলাকায় মায়ের বাসায়। তার মা ময়না বেগম পোশাক শ্রমিক। বাবা রবিউল ইসলাম আরেকটি বিয়ে করে আলাদা থাকেন। পরদিন আয়েশা ঝালকাঠির নলছিটিতে দাদাশ্বশুরের বাড়িতে যায়। সেখান থেকেই গতকাল তাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আয়েশার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর সলিমগঞ্জ এলাকায়।

এদিকে, গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় নিজের নাম ছাড়া বাকি তথ্য ঠিকঠাক দেয়নি আয়েশা। সে জানিয়েছিল, তার মা-বাবা অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছে, অথচ তারা বেঁচে আছেন। সে নিজেও ওই আগুনে দগ্ধ হয় বলে জানিয়েছিল। তার শরীরে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন আছে ঠিকই। তবে তার এখনকার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকার তথ্যও ঠিক নয়। তবে দেড় বছর আগে সে ক্যাম্পে ভাড়া থাকত। এর পর থেকে সে হেমায়েতপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকে। তাদের দুই বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।

গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া মোহাম্মদপুর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম মাসুম গতকাল সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার দুজনকে নিয়ে আমরা ঢাকার পথে। থানায় নিয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে চুরি করে ধরা পড়ার পর ধস্তাধস্তির সময় ছুরিকাঘাতের কথা জানিয়েছে আয়েশা।

এদিকে, আয়েশা এর আগে এমন কোনো অপরাধ করেছে কিনা, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে তার স্বামীর সম্পৃক্ততা ছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।

প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই গ্রেপ্তার আয়েশা : মা-মেয়েকে হত্যার পর আয়েশা স্বামীর নানার সহযোগিতায় বুধবার সকালে শ্বশুরবাড়ি নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর গ্রামের সিকদার বাড়িতে আসে। এটাই তার প্রথম শ্বশুরবাড়িতে আসা। সেখান থেকে তাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, আয়েশার স্বামী রাব্বির মায়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের ৯ সদস্যের একটি দল এ অভিযান চালায়। রাব্বি দপদপিয়া এলাকার জাকির হোসেন সিকদারের ছেলে। তাঁর জন্মস্থান নলছিটির দপদপিয়া এলাকায় হলেও স্থায়ী বাস ছিল ঢাকায়।

রাব্বির ফুপু মিনারা বেগম জানান, রাব্বি পাঁচ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান। গ্রামে তাদের কোনো বসতঘরও নেই। অল্প বয়সে এলাকা ছেড়ে যাওয়ায় তিনি নিজের বাড়ি চিনতেন না। নানার সহযোগিতায় গতকাল সকাল ৮টার দিকে তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান। কিছুক্ষণ পর চাচার বাসায় নাশতা খেতে গেলে পুলিশের একটি দল সেখানে হাজির হয়।

এর আগে সোমবার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বাসা থেকে গৃহিণী লায়লা আফরোজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই ঘটনায় খুন হওয়া তাঁর মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাঁর বাবা আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার ঘটনায় তিনি সোমবার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় আয়েশার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

আজিজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ঘটনার চার দিন আগে তাঁর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয় আয়েশা। সে বোরকা পরে আসত। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিনও সে বোরকা পরে ঢোকে। তবে পৌনে দুই ঘণ্টা পর বের হয় নাফিসার স্কুলের পোশাক পরে; ছিল মাস্ক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার