Logo
Logo
×

জাতীয়

সীমিত হলো অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৭ এএম

সীমিত হলো অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সীমিত হলো প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার। পরিচালনা করতে পারবে না বদলি, পদোন্নতি, প্রকল্প গ্রহণ, বরাদ্দসহ নীতি নির্ধারণীমূলক কোনো কার্যক্রম। সরকার সীমাবদ্ধ থাকবে শুধু রুটিন দায়িত্ব পালনের মধ্যে। সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়াই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ।

সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিধি-বিধানে তেমনটিই বলা আছে। তবে ভিন্ন মতও পোষণ করছেন কোনো কোনো আইনজ্ঞ।

সংবিধান ও আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু আইনি সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে না এই সরকার। কারণ এসব সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারকে শুধু রুটিন বা দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যেতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব। তফসিল ঘোষণার ফলে সরকারের সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন চলে এসেছে। ইসির জারিকৃত নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলতেও সরকার বাধ্য। 

নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে এমন নতুন কোনো ফিল্ড-লেভেল পোস্টিং, নিয়োগ বা পদোন্নতি দিতে পারবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। উপদেষ্টারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন না।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমন কোনো নতুন আর্থিক অনুদান বা বরাদ্দ দিতে পারবে না এ সরকার। তবে ইতোমধ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।

তফসিল ঘোষণার ফলে যেকোনো বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করবে।

বিদ্যমান সংবিধানে সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান ছিল না। কিন্তু সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার’ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বৈধতা নেয়া হয়। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় থাকতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি নিরপেক্ষতার ‘ব্রিজ’ হিসেবে কাজ করতে হবে। যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া মসৃণ হয়। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

সরকারের এখতিয়ার সীমিত হওয়া প্রশ্নে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, সরকার অন্তর্বর্তী হোক, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক কিংবা হোক দলীয় সরকার, সাধারণ প্রাক্টিস হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে সরকারের বেশ কিছু এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে। 

বিশেষত প্রশাসন, পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সরকারি মেশিনারিজগুলো নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে চলে আসে। ইসির অনুমোদন ছাড়া অ্যাডমিন, পুলিশ ইতাদিতে বদলি, পদায়ন করা যায় না। যদি দলীয় সরকারও হতো, তাও সরকারের এখতিয়ার সীমিত হয়ে যায়। সরকার দায়িত্ব পালন করবে রুটিন মাফিক। সরকারের কাজ সরকারই করবে। নির্বাচনের কাজ নির্বাচন কমিশন করবে। সরকার নতুন কোনো প্রকল্পও হাতে নিতে পারবে না নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন ছাড়া। কারণ এতে প্রার্থী বিশেষের স্বার্থ নিহিত থাকতে পারে।

তবে ভিন্নমত পোষণ করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, এটি কোনো কেয়ারটেকার সরকার নয়। এটি অন্তর্বর্তী সরকার। কেয়ারটেকার সরকারের যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সেটি এই সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতাও নেই এ সরকারের। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহালের যে রায় দিয়েছেন সেখানেও বলা হয়েছে। এটি পরবর্তী সংসদ থেকে কার্যকর হবে। সে হিসাবে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’কে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গণ্য করা যাবে না। কেয়ারটেকার সরকারের কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেমন- সরকারের কোনো উপদেষ্টা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু আমরা দেখছি, এ সরকারের দু’জন উপদেষ্টা পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকার’-এর কাছ থেকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর আচরণ প্রত্যাশা করাটাই উচিত নয়। অন্তর্বর্তী সরকার রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে কি পারবে না। এ বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে, মর্মে অভিমত দেন এ আইনজীবী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার