ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ফুড স্ট্যাম্প নীতি আসছে
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪ এএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্ন্যাপ–এ (সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম) বছরের সবচেয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন অনুমোদন করেছেন। নতুন নিয়মের লক্ষ্য- কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের কাজ বা প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত রাখা, যোগ্যতার মানদণ্ড আরও কঠোর করা এবং রাষ্ট্রীয় খরচ কমানো। সমর্থকেরা বলছেন, এতে কর্মসংস্থান বাড়বে ও ফেডারেল ব্যয় কমবে। তবে সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন, এই নীতিই আবারও লাখো ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের খাবারের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে।
পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করেছে সদ্য অনুমোদিত ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট- ২০২৫, যা স্ন্যাপ–এর কাঠামো ও যোগ্যতার শর্ত নতুন করে সাজিয়েছে। জুলাই ৪ থেকে কার্যকর হওয়া এই আইন এখন রাজ্য ও কাউন্টি প্রশাসন পর্যায়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
নতুন নীতির মূল কথা- যারা কাজ করতে সক্ষম, তারা কাজ করবেন বা কাজের প্রস্তুতিতে থাকবেন, তবেই পাবেন সরকারি খাদ্য সহায়তা। এর ফলে দেশজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে মাসে কমপক্ষে ৮০ ঘণ্টার কাজ, প্রশিক্ষণ বা অনুমোদিত কমিউনিটি কার্যক্রম প্রমাণ করতে হবে। পূর্বের নিয়ম যেখানে ৪৯ বছরের নিচের প্রাপ্তবয়স্কদের সীমাবদ্ধ ছিল, নতুন আইনে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪ বছর পর্যন্ত হয়েছে।
হোয়াইট হাউস যুক্তি দিচ্ছে- কঠোর নিয়ম দীর্ঘমেয়াদে সরকারি নির্ভরতা কমাবে, শ্রমবাজারে আরও মানুষকে যুক্ত করবে এবং প্রোগ্রামে ভুলভাবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ হ্রাস করবে। প্রশাসনের একাধিক ব্যয় বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই নীতি আগামী কয়েক বছরে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে।
তবে অর্থনৈতিক যুক্তির পাশাপাশি সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। বেশ কিছু রাজ্য সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ- ফেডারেল সরকার খরচ কমালেও প্রশাসনিক দায়িত্ব ও চাপে পড়ছে রাজ্যগুলো। কাজের ঘণ্টা যাচাই, প্রশিক্ষণ সুযোগ সৃষ্টি এবং নিয়মিত রিপোর্টিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজ্যগুলোর অতিরিক্ত বাজেট ও জনবল লাগবে- যা অনেক স্থানেই চাপ বাড়াবে। ফলে কঠোর নিয়মে বহু কর্মহীন প্রাপ্তবয়স্ক দ্রুত স্ন্যাপ সুবিধা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
এছাড়া নতুন নীতি স্পষ্টভাবে অ্যাবল-বডিড অ্যাডাল্টস উইদাউট ডিপেনডেন্টস (এবিএডব্লিউডি) গ্রুপকে লক্ষ্য করেছে, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর কাজের শর্ত পূরণ না করলে সুবিধা কাটা যাবে। সমালোচকেরা বলছেন, এতে বাস্তবতা ও শ্রমবাজারের ওঠানামা বিবেচনায় না এনে একটি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাপক এই পরিবর্তন শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয় বরং ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর রাজনৈতিক দর্শনের অংশ। কঠোর কর্মনিয়ম, অভিবাসন নীতিতে সীমাবদ্ধতা এবং সরকারি সুবিধা লাভের পথ সংকোচ- সব মিলিয়ে এটি একটি কঠোর নিরাপত্তা নেট তৈরির প্রচেষ্টা।
এই নীতিগুলো শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুত সাশ্রয় দেবে কিনা, আর কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা- তা নির্ভর করবে রাজ্য প্রশাসনের কার্যকর বাস্তবায়ন, শ্রমবাজারের অবস্থা এবং রাজনৈতিক চাপের ভবিষ্যৎ গতিপথের ওপর। তবে এটা নিশ্চিত যে ফুড স্ট্যাম্প পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিতর্ক এখন আরও তীব্র হচ্ছে।