Logo
Logo
×

জাতীয়

সাজিদ উদ্ধার, রুদ্ধশ্বাস অভিযানের বর্ণনা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ এএম

সাজিদ উদ্ধার, রুদ্ধশ্বাস অভিযানের বর্ণনা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার

রাজশাহীর তানোরে দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে গভীর নলকূপের পাইপ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশু সাজিদকে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধার অভিযান সমাপ্তির পর বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, আমরা যখন শিশু সাজিদকে অচেতন অবস্থায় পাইপের ভেতর থেকে তুললাম, তখন আমাদেরও আবেগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরে জানা যায়—শিশুটি আর নেই। তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এ কর্মকর্তা।

এ উদ্ধার অভিযানকে অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি সাধারণ কোনো উদ্ধার কার্যক্রম ছিল না। আগুন নেভানো বা পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষের উদ্ধার কাজের চেয়ে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাইপটির ব্যাস ছিল মাত্র ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা আবেগের বশবর্তী হয়ে পাইপে নিজ উদ্যোগে উদ্ধার চেষ্টা চালান। এতে হিতে বিপরীত হয়ে পাইপের ভেতরে প্রচুর মাটি ও খড়কুটো জমে যায়, যার নিচে চাপা পড়ে শিশুটি।

তিনি বলেন, আমরা সার্চ ভিশন ক্যামেরা প্রবেশ করানোর পর দেখতে পাই পাইপের ভেতরে কেবল মাটি ও খড়কুটো—ভিকটিমের কোনো অস্তিত্ব বা হাত-পা দেখা যাচ্ছিল না। তখনই আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তবুও শিশুটি বেঁচে আছে—এই আশায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সেফটি মেনে উদ্ধার কাজ চালানো হয়।

উদ্ধার অভিযানে তিনটি এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হলেও মূল পাইপের স্থানে কোনো কম্পন তৈরি না করতে যান্ত্রিক ও হাতে খননের সংমিশ্রণে ‘ইমপ্রোভাইজড’ কৌশলে কাজ পরিচালনা করা হয়। এই কাজে সার্বক্ষণিক সহায়তার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী, সাংবাদিক, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বক্তব্যের শেষে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শেষে ছোট ছোট গর্ত কিংবা ‘লুপহোল’ অরক্ষিত রেখে যাওয়ার বিষয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অবহেলার কারণে অতীতেও দুর্ঘটনা ঘটেছে, আজও ঘটল। এ বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

এর আগে, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু সাজিদ। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধার অভিযান চালান। প্রায় ৪০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাজিদ কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিব উদ্দীনের ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার