এর আগেও জঘন্য কাজে আটক হয় আয়েশা, সেই সূত্রেই গ্রেফতার
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর হাতে মা ও মেয়ে হত্যার ঘটনায় মূল আসামি গৃহকর্মী আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, গৃহকর্মী আয়েশা এর আগেও মোহাম্মদপুর এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছিল। যে ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় তার নামে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়েছিল। সেই জিডি ও আসামি আয়েশার গলায় পোড়া দাগের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। শুধু গৃহকর্মী হিসেবে কর্মস্থলেই না, আয়েশা তার নিজ বোনের বাসায়ও চুরির ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে গৃহকর্মী আয়েশা বাসায় প্রবেশ করে। এরপর ৯টা ৩৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে ঘটনার ৩ দিন আগে কাজে যোগ দেয় গৃহকর্মী ‘আয়েশা’। পরে আয়েশাকে বাদী করে মামলা করেন নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭)।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে, মুখ ঢেকে আসা-যাওয়া করতো।
তিনি আরও জানান, ঘটনার আশেপাশে কোনো ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মী কর্তৃক সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে। গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বাস, গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরি তথ্য নিয়ে মাঠে নামে তদন্তকারীরা। এখানেও আয়েশার তথ্য মিলে যায়। হুমায়ুন রোডে সেই ভুক্তভোগী পরিবার থেকে একটি পুরনো মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, যা থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান।
সিডিআরের বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়- নম্বরটি ব্যবহার করতো রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে রাব্বির স্ত্রীই হলো সেই আয়েশা এবং তারা পূর্বে জেনেভা ক্যাম্পে থাকতো। বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। পরবর্তীতে হেমায়েতপুরে অভিযান চালানো হলে দরজা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানিয়ে বলে, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে।
তৃতীয় দিন টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার বাকবিতন্ডা হয়। ওই গৃহকর্মী চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার ও চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে আবারও বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আফরোজা ফোনে তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঘাতক গৃহকর্মী।
এদিকে, একই সময়ে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসা মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এবং বাসার দারোয়ানকে টেলিফোনে জানানোর চেষ্টা করলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। একই সঙ্গে টেলিফোনের মূল তার ছিঁড়ে ফেলে। আয়েশার ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করে। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে একটি ব্যাগের ভেতরে ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে আয়েশা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে স্কুলড্রেস পরিবর্তন করে এবং সেখান থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাক নদীতে ফেলে দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আয়েশার আগে থেকেই চুরির স্বভাব রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি থেকেও ২ লাখ টাকা ও ৪ ভরি সোনার গহনা চুরি করেছিল। এর আগে হুমায়ুন রোডে চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
এ সময় দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, দেশবাসী তথা ঢাকাবাসীর উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুরোধ আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন, তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আপনার বাসায় কাজ করা ব্যক্তির পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে রাখবেন। কারণ আপনি বাসার গৃহকর্মীর বানানো খাবার খান, আপনার বেডরুমে গৃহকর্মী প্রবেশ করে। এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জড়িত।