Logo
Logo
×

জাতীয়

আরেক ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগে আয়েশাকে খুঁজে পায় পুলিশ

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম

আরেক ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগে আয়েশাকে খুঁজে পায় পুলিশ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্ত্রী আফরোজা ও তার মেয়েকে খুনের অভিযোগে স্বামী রাব্বিসহ গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলায় আয়েশার ছয় দিনের ও তার স্বামী রাব্বির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এই হত্যাকাণ্ডের পর কোনো ক্লু না থাকায় আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও তাকে আইনের আওতায় আনা চ্যালেঞ্জ ছিল পুলিশের। কারণ তার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত ‌ছিল না ওই বাসায়। ওই বাসায় ঢোকার আগে বোরকা পরা এবং হত্যাকাণ্ডের পর স্কুল ড্রেস পরে বের হওয়া— সিসিটিভির এমন ফুটেজেও চেনার মতো স্পষ্টতা ছিল না।

মাত্র দুই হাজার টাকা চুরির জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, ঘটনার আশপাশে কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মীর মাধ‌্যমে সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে পু‌লিশ। নিহত আফরোজার স্বামীর বর্ণনা অনুসারে তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ করেন, গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বসবাস ও গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরির তথ্য।

পুরনো তথ্য ঘেঁটে হুমায়ুন রোডের একটি ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান। কল রেকর্ড বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়, নম্বরটি ব্যবহার করতেন রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে, রাব্বির স্ত্রী আয়েশা। তারা আগে জেনেভা ক্যাম্পে থাকতেন।

এরপর হেমায়েতপুরে তারা যে বাসায় থাকতেন, সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে রাব্বির পরিবারের অন্য সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সর্বশেষ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি ছুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন ওই বাসা থে‌কে দুই হাজার টাকা চুরি করেন আয়েশা। তৃতীয় দিন সেই টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্কাতর্কি হয়।

চতুর্থ দিন সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে ওই বাসায় যান আয়েশা। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে গৃহকর্ত্রীর স‌ঙ্গে আবারও তর্ক হয়। প‌রে বিষয়টি নি‌য়ে আফরোজা তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন আয়েশা। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন আয়েশা।

এদিকে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসা মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করেন আয়েশা। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করেন আয়েশা। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এ সময় ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে যান। প‌রে ঢাকা ছাড়ার সময় মানিকগঞ্জের সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাকভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেন।

তিনি আরও জানান, আয়েশার স্বামী রাব্বী হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশাকে ঢাকা থেকে পালাতে সাহায্য করেন।

গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লায়লা ফিরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জোড়া হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার