Logo
Logo
×

জাতীয়

মা–মেয়ে হত্যা, ‘গলায় পোড়া দাগ’ ক্লু ধরে যেভাবে গ্রেপ্তার হন আয়েশা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২২ পিএম

মা–মেয়ে হত্যা, ‘গলায় পোড়া দাগ’ ক্লু ধরে যেভাবে গ্রেপ্তার হন আয়েশা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর হাতে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশা, তার স্বামী রাব্বি, দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই হাজার টাকা চুরির জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালত শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন এবং রাব্বির ৩ দিনের রিমান্ড অনুমোদন করেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,  শুরুতে গৃহকর্মী আয়েশাকেই সন্দেহ করা হয়েছিল, কিন্তু তাকে শনাক্ত করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, তার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় ওই বাসায় সংরক্ষিত ছিল না। সে বোরকা পরে আসা-যাওয়া করত বলে সিসিটিভিতেও কোনো স্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

ডিজিটাল কোনো ক্লু না পাওয়ায় তদন্তকারীরা ম্যানুয়ালি খোঁজ নিতে থাকেন। নিহত আফরোজার স্বামীর দেওয়া বিবরণে উঠে আসে তিনটি বিশেষ তথ্য—গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাস, গৃহকর্মীর পরিচয়ে পূর্বের চুরির ইতিহাস।

পুরোনো তথ্য ঘেঁটে হুমায়ুন রোডের একটি ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সেখান থেকেই আসামির সন্ধান শুরু হয়। কল রেকর্ড বিশ্লেষণে পুলিশ জানতে পারে, নম্বরটি ব্যবহার করতেন রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। পরে জানা যায়, রাব্বির স্ত্রীই আয়েশা। তারা আগে জেনেভা ক্যাম্পে থাকতেন।

এরপর হেমায়েতপুরে তাদের আগের বাসা তালাবদ্ধ পাওয়ায় পুলিশ রাব্বির পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুসারে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন আয়েশা বাসা থেকে ২ হাজার টাকা চুরি করেন। তৃতীয় দিন সেই টাকা নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়। চতুর্থ দিন বাসায় যাওয়ার আগে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে নেন তিনি। টাকা চুরির বিষয় নিয়ে পুনরায় তর্কের সময় গৃহকর্ত্রী আফরোজা তার স্বামীকে কল করতে চাইলে আয়েশা পেছন থেকে ছুরি মারে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে আফরোজাকে হত্যা করেন।

মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসা ছুটে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে কল দিতে চাইলে আয়েশা মূল তার ছিঁড়ে ফেলেন।

ঘটনার পর রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হন আয়েশা। ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে পালানোর সময় সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেন।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশাকে ঢাকা ছাড়তে সহায়তা করায় তার স্বামী রাব্বীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লায়লা ফিরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই নিহত লায়লা আফরোজার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার