কলকাতা থেকে পালাতে পারছে না আ.লীগের সহস্রাধিক নেতা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এবং পুলিশ কর্মকর্তার একটি বড় অংশ বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থান করছেন।
তাদের মধ্যে অনেকে আবার তৃতীয় দেশে যেতে চাইলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ নিয়ে পলাতকদের মাঝে শঙ্কা বেড়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
ফেনীর এক বিতর্কিত নেতা, যিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার পরপরই পরিবারসহ কলকাতা গিয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি লন্ডনমুখী হতে চাইলেও কলকাতা বিমানবন্দর থেকে অনুমতি না থাকায় তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশের এক অতিরিক্ত ডিআইজিও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন পলাতক নেতা ও পুলিশ কর্পোরেটও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা–কর্মী এবং বহু পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপন করেন। এদের বড় অংশ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন- ত্রিপুরা, আগরতলা, কলকাতা, আসাম থেকে মেঘালয় পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছেন তারা। কেউ কেউ হোটেল ভাড়া নিয়েছেন, অনেকে শহরতলিতে সস্তা বাসায় থাকছেন।
ভারতে থাকা নেতাদের অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ, কারো কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই- ফলে ভারত ছাড়াও সম্ভব হচ্ছে না।
আবার সেখানে অবস্থান করলেও পুলিশি নজরদারি এড়াতে তারা দিনের বেলা ঘরে থাকেন, রাতেই বাইরে বের হন।
আসাদুজ্জামান খানের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা
ভারত থেকে কথা বলা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। রায় ঘোষণার আগের দিন নিউ মার্কেটে দেখা মিললেও এরপর আর তার অবস্থান কারও জানা নেই। তবে তিনি ভারতেই আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও এসব নেতা দাবি করছেন তারা রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়, তবুও অভিযোগ আছে—কলকাতায় বসে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা অন্যান্য মাধ্যমে দেশে থাকা অনুসারীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সহস্রাধিক নেতা ভারতে
আওয়ামী লীগের একটি অভ্যন্তরীণ খসড়া তালিকা অনুযায়ী, প্রায় দুই হাজারের মতো নেতা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে সহস্রাধিক নেতা রয়েছেন ভারতে- বিশেষত কলকাতায়। হোয়াটসঅ্যাপ বা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে বলেও কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ইউনিট সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারা সপ্তাহখানেক অবস্থান করে পলাতকদের ঠিকানা, চলাফেরা ও যোগাযোগের বিষয়ে তথ্য নিয়ে সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
কলকাতার কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের আগমন বাড়তে থাকে।
নিউ মার্কেট, নিউটাউন, মারকুস স্ট্রিট ও গড়িয়া এলাকায় তাদের উপস্থিতি বেশি। কলকাতা পুলিশের দল প্রায় প্রতিদিনই হোটেলে গিয়ে বাংলাদেশি অতিথিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় কেউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।