মোহাম্মদপুর মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় এই সেই গৃহকর্মী আয়েশা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশালের নলছিটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বহুতল ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে সংঘটিত মা ও মেয়ে হত্যার ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে সব মহলে। গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটে, যখন নিহত লায়লা আফরোজের (৪৮) স্বামী ও শিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম কর্মস্থলে ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- লায়লা আফরোজ এবং তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫), যিনি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের দুজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার দেহে ৬টি গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
শুরু থেকেই এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন তাদের বাসায় মাত্র চার দিন আগে কাজে আসা এক গৃহকর্মী, যার নাম আয়েশা বলে জানিয়েছিলেন সেই গৃহকর্মী।
হত্যাকাণ্ডের দিনের ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া যায়- অভিযুক্ত গৃহকর্মী সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নিহত মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
ঘটনার নৃশংসতা দেখে পুলিশ ধারণা করছিল হয় ‘প্রশিক্ষিত কিলার’ অথবা অতিরিক্ত ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। পুলিশ বলছে, সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন নৃশংসতা প্রদর্শন প্রায় অসম্ভব। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এমন সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেখেননি।
ঢাকায় গৃহকর্মীর হাতে নিহত মা ও মেয়েকে নাটোরে দাফন
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে গৃহকর্মীর ছুরিকাঘাতে নিহত মা লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা লায়লা বিনতে আজিজকে নাটোরে দাফন করা হয়েছে।
নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে মঙ্গলবার বাদজোহর জানাজা শেষে শহরের গাড়িখানা গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে।
নিহত লায়লা আফরোজ (৪৮) ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫) মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। নাটোর শহরের বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা নিহত নাফিসার বাবা এমজেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্বামীর চাকরি ও মেয়ের স্কুলের সুবাদে তারা পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলায় থাকতেন।
সোমবার সাড়ে বেলা ১১টার দিকে বাসা থেকে গৃহিণী লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে পাঠায় পুলিশ। মরদেহ দুটির ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে করে নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছার নিজ বাসভবনে আনা হয় মরদেহ দুটি।
ঢাকায় গৃহকর্মীর ছুরিকাঘাতে মা-মেয়ে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে তাদের বাসায় এক সময় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা নাটোরের মেয়ে রুবী খাতুন এ সময় দৌড়ে এসে লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান ধরেই কান্না শুরু করেন। রুবীর কান্না দেখে এ সময় কেঁদেছেন অসংখ্য মানুষ। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্বজনরাও।
নিহত লায়লা আফরোজের ছোট ভাই উত্তরায় বসবাসরত ফরহাদ হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুরে বড় বোনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভিডিও কল করে লায়লা জানান, তার বাসার চাবি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চাবি হারানোর ঘটনায় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল। নতুন কাজের মেয়ে বাসায় কাজ শুরুর পর চাবি হারানো স্বাভাবিকভাবে নেননি তিনি। দুই-এক মিনিটের এ কথোপকথনই আমাদের শেষ কথা ছিল।
নাটোরে লায়লার প্রতিবেশী মামুন শিকদার বলেন, লায়লাদের পুরো পরিবারকে আমরা ভালোভাবে চিনি। তাদের পরিবারের কেউ কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো দিন কথা বলেছে এমনটা শুনিনি। অথচ এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড তাদের সঙ্গেই ঘটল যা মেনে নেওয়া কঠিন। এলাকার সবাই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন করে দায়ীদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে বোরকা পরে বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে হত্যার পর স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বেরিয়ে যায় গৃহকর্মী। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। তার মাত্র চার দিন আগেই তাদের বাসায় কাজ নিয়েছিল ওই গৃহকর্মী।