Logo
Logo
×

জাতীয়

‘আমাকে সারারাত বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়’

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩০ এএম

‘আমাকে সারারাত বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়’

২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখানে হাসনাতকে সারারাত বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ জবানবন্দি দেওয়ার সময় হাসনাত আবদুল্লাহ নামে পরিচিত মো. আবুল হাসনাত এ কথা জানান। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত এদিন ট্রাইব্যুনালে আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন বিষয়ের বিবরণ দেন।

তিনি ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন থেকে বর্ণনা করেন। জবানবন্দি দেওয়ার সময় হাসনাত জানান, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই তারা ছয়জন হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে গায়েবানা জানাজা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল বিকেল ৫টার মধ্যে খালি করারও নির্দেশ দেয়। সমন্বয়ক হাসনাতসহ অন্যরা অমর একুশে হল থেকে মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসির দিকে যেতে চাইলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে পুলিশ ও বিজিবি তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদস্যরাও তাদের গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

হাসনাত বলেন, আমরা যখন গায়েবানা জানাজা শেষ করে কফিন মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা আমাদের ওপর পুনরায় টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে আমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র আহত হই। আক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হাসনাত জানান, পরে তিনি সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তার মামার বাসায় চলে যান। যেহেতু হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও তার সঙ্গে তার মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে ডিজিএফআই সদস্যরা তাদের দুজনকেই উঠিয়ে নিয়ে যান। তারা প্রথমে ডিজিএফআই সদস্যদের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, ওইদিন রাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিনজন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান নওফেল প্রবেশ করেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তাদের সঙ্গে আমাদের মিটিং করতে চাপ প্রয়োগ করেন। এক ঘণ্টারও বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করে শুধু মিটিং করতে বলেন। অন্য সমন্বয়ক নাহিদ, আসিফের সঙ্গে কথা না বলে আমরা যেকোনো ধরনের মিটিং করতে অস্বীকৃতি জানাই। ডিজিএফআই পীড়াপীড়ি করে আমাদের মিটিংয়ে বসাতে ব্যর্থ হলে সেদিন আমাদের সামনে দিয়ে আবার ওই তিনজন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান। সেদিন মিটিং না করায় ডিজিএফআই আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

হাসনাত জবানবন্দিতে বলেন, ডিজিএফআই আমাদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মাঝে একটি গোপন স্থানে যা সেইফ হাউজ নামে পরিচিত, সেখানে নিয়ে আটক রাখে। সেখানে আমাদের জিএফআইসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে ঠিক পেছনে একটি টেলিভিশন সেট করা ছিল। আমাদের যিনি জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের সাথে সাথে টিভি দেখছিলেন। আমরা আমাদের পেছনে থাকা টিভি দেখতে পারছিলাম না। তিনি সেখান থেকে ফোন করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, বিশেষ করে ডিবিসি, সময় টিভি ও একাত্তর টিভিতে ফোন করে নিউজ পরিবর্তন এবং স্ক্রল সংশোধনের নির্দেশ দিচ্ছিলেন। সে অনুযায়ী টিভি চ্যানেলগুলো সংবাদ প্রচার করছিল এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক মর্মে দেখানোর চেষ্টা করছিল। আমাদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও তার ভেতরটা ছিল আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত। ১৭ জুলাই দিবাগত রাতে প্রায় আড়াইটার (১৮ জুলাই ২০২৪) পর্যন্ত আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফজরের সময় আমাদের আবার ডেকে তোলা হয় এবং পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা আমাকে বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ১০ মিনিটে বিএনপির লাখো জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। আমাদের আন্দোলন একইভাবে নস্যাৎ করতে তার সময় লাগবে না।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেটআপ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তারা আমাদের চাপ দিচ্ছিল আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা বসতে এবং সেটি সংবাদ সম্মেলন করে জাতির কাছে জানাতে। সে সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা আমাদের অন্যান্য সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ডিজিএফআইর সদস্যরা আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমাদের সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমার ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সাথে যোগযোগ করতে সক্ষম হয়। আমি তাকে তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায় চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনে আছে। ডিজিএফআই তাকে কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে এনে আমাদের সাথে আটক রাখে। সেখানে আমাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদরাসার ছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তার বোন মাদরাসার ছাত্রী হওয়ায় তাকে শিবিরট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। আমার ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করতে পারায় আমি নিজে বিব্রত হই এবং আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।

তিনি বলেন, আটক থাকা অবস্থায় আমরা জানতে পারছিলাম না সারা দেশে কী হচ্ছে এবং দেশবাসীও জানতে পারছিল না আমাদের সাথে কী হচ্ছে। দেশবাসীর কাছে আমাদের ভিলেন বানানোর উদ্দেশ্যে আমরা সরকারের সাথে আলোচনায় বসেছি মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করা হয়। আমাদের যখনই মিডিয়ার সামনে আনা হচ্ছিল তখনই আমরা বলছিলাম আমাদের পূর্ব ঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কিন্তু গণমাধ্যম, টিভি চ্যানেল, বিশেষ করে তিনটি চ্যানেল সময়, একাত্তর ও ডিবিসি আমাদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৮ জুলাই সারাদিন আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ডিজিএফআইয়ের ডিজিসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই সেইফ হাউজে উপস্থিত হয়ে সর্বশেষবারের মতো আমাদের মিটিং করে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে চাপ প্রয়োগ করেন। বিভিন্ন সংস্থা যেমন, এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে আন্দোলন দমনের ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা দেখতে পাই। আমরা যেহেতু বাইরের কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না সেহেতু আমি, সারজিস ও হাসিব সিদ্ধান্ত নেই আমাদের প্রেস কনফারেন্স করে দাবি দাওয়া জানাতে দিলে আমরা পদ্মায় যাব। সে শর্তে আমরা পদ্মায় যেতে রাজি হই এবং প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের দাবি দাওয়া লিখিতভাবে প্রকাশ করি। 

আমরা প্রেস কনফারেন্সে বারবার বলি, আমরা সরকারের সঙ্গে কোনো মিটিংয়ে আসিনি এবং শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে আমরা কোনো সংলাপ করতে পারি না এবং আমাদের পূর্ব ঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দুঃখজনকভাবে মিডিয়া আমাদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে। শাটডাউন কর্মসূচি যেন প্রত্যাহার করে নিই সেজন্য মিডিয়ার সামনেই এক সেনা কর্মকর্তা আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। আমরা অস্বীকৃতি জানালে তিনি তখন কিছু না বলে আমাদের পুনরায় সেইফ হাউজে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে দেখি আমাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে প্রচার করে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি মর্মে খবর পরিবেশিত হতে থাকে, যা বাস্তব ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রেস কনফারেন্সে আমাদের কথা কেটে দিয়ে শুধু দাবিগুলো প্রচারিত হতে থাকে। সেদিন রাতে আমাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

নহিদ ইসলামকে গুমের ঘটনার বর্ণনায় হাসনাত জানান, ১৯ জুলাই দুপুরে তারা ছাড়া পেয়ে জানতে পারেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে গুম করা হয়েছে। আমি, সারজিস আমাদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদের বাবা-মাও তাকে খুঁজতে থাকে। ডিবি অফিস ও সিআইডি অফিসে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে আমাদের কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি। বের হয়ে আমরা আরও জানতে পারি, অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের নয় দফা ঘোষণা করেছেন এবং এই নয় দফা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায়। বের হয়ে আমরা আন্দোলনে আহত, নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যাসহ নির্যাতনের মাত্রা সম্পর্কে অবগত হই। এরমধ্যে নাহিদকে খুঁজে পাওয়া যায় এবং তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা নাহিদের সঙ্গে দেখা করতে যাই এবং আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে গিয়ে দেখি, হাসপাতাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

সমন্বয়ক আসিফ ও বাকের গুম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯ জুলাই রাতে তৎকালীন সরকার আন্দোলন দমনের জন্য পরের দিন থেকে কারফিউ ঘোষণা করে। কারফিউ চলাকালে আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। আমাদের শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত ছিল এবং সারাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত থাকে। এরপর আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ ও বাকের গুম হয়। আসিফের বাবা দুইদিন পর ঢাকায় এসে তার সন্তানের খোঁজ করতে থাকেন। আমরা তাকে সাথে নিয়ে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করি। সেই সংবাদ সম্মেলনেও আন্দোলন প্রত্যাহার করতে ডিজিএফআই নাহিদকে চাপ প্রয়োগ করে। নাহিদ চাপ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর পরের দিন আসিফ ও বাকেরকে খুঁজে পাওয়া যায় এবং তাদেরকেও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে তাদেরকে দেখতে গেলে আমাকে বাধা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে আসিফ, বাকের ও নাহিদকে তুলে নিয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ২৭ জুলাই দুপুর ১২টায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে আমাকে ও সারজিসকে তুলে নিয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮ জুলাই অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে নিয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে সেখানে আমাদের প্রত্যেককে একজন এডিসির অধীনে রাখা হয়। আমি ছিলাম এডিসি জুনায়েদের অধীনে। তিনি আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। আমাকে একবার সারারাত বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। আমি বারবার জোর দিয়ে বলতে থাকি হয় আমাকে গ্রেপ্তার করেন না হলে ছেড়ে দেন, হেফাজতে রাখার আইনগত কোনো ভিত্তি নাই।

হাসনাত বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করেছিলেন ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি কয়েকবার আমাদের সবাইকে তার রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করতেন। সেখানেই আমাদের সবার সাথে দেখা হতো। আমরা একবার হাঙ্গার স্ট্রাইকের চিন্তা করি। তখন ডিবি হারুন আমাদের দুপুরবেলা তার রুমে ডেকে খেতে দিয়ে খাওয়ার ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দেন। এরপর আমরা হাঙ্গার স্ট্রাইক শুরু করি। আমাদের আত্মীয়স্বজনকে ধরে আনা হবে মর্মে আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। আত্মীয়স্বজনরা ডিবি অফিসের বাইরে এলেও আমাদের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ডিবি অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়। তাদের দিয়ে আমরা সুস্থ আছি মর্মে মিডিয়ায় বক্তব্য প্রচার করা হয়। আমরা ভেতর থেকে জানতে পারি, শিক্ষকরা আমাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করছিলেন। ওই আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনও যুক্ত হয়।

তিনি বলেন, একদিন ডিবি হারুন আমাদের ছয় সমন্বয়ককে তার রুমে ডেকে এনে একটি লিখিত বর্ণনা সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের হাতে দিয়ে তা পাঠ করতে বলেন। নাহিদ ইসলাম সেটি পাঠ করলে তা ভিডিও করে সারাদেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, নাহিদ ইসলাম আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। ১ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩০ ঘণ্টাব‍্যাপী অনশন অবস্থায় ছিলাম। আমরা বের হয়ে এসেই আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত পরে ৩ থেকে ৫ আগস্টের ঘটনাগুলোও উল্লেখ করেন তার জবানবন্দিতে। এ সময় তিনি রংপুরে আবু সাঈদসহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দাবি করেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার