Logo
Logo
×

জাতীয়

কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির ঝুঁকিতে অভিবাসীরা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ এএম

কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির ঝুঁকিতে অভিবাসীরা

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি সাম্প্রতিক সময়ে অনথিভুক্ত ও বিশেষ অভিবাসন সুবিধা পাওয়া অভিবাসীদের জন্য নজিরবিহীনভাবে কঠোর হয়ে ওঠেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার পর অভিবাসীদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত, শরণার্থী সংখ্য কমিয়ে আনা, অভিবাসন প্রত্যাশীদের ধরপাকড়-বহিষ্কার, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন নীতি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা প্রাপ্তিতে কঠিন শর্তারোপসহ কঠোর অভিবাসন নীতি প্রয়োগ করে আসছেন। এছাড়াও ইমিগ্রেশন কোর্টে শুনানীতে গিয়ে গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা।

এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে আফগান নাগরিক কর্তৃক ন্যাশনাল গার্ডের ওপর হামলার ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের ওপর আরো আক্রমণাত্মক অভিবাসন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।  আশ্রয়প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে গ্রিন কার্ড, ভিসা, ভ্রমণ অনুমতি, এমনকি ওয়ার্ক পারমিট মেয়াদ সীমিত সব ক্ষেত্রেই নতুন নিষেধাজ্ঞা, স্থগিতাদেশের খড়গ একযোগে নেমেছে। দেশজুড়ে অভিবাসী পরিবারগুলো যখন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে, তখন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসও এমন সব বিল পাসের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের পথকে আরও সংকুচিত করতে পারে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার পরপরই প্রশাসনের প্রথম বড় সিদ্ধান্ত ছিল আশ্রয় বা অ্যাসাইলামপ্রক্রিয়া কার্যত স্থগিত করে দেওয়া। হোয়াইট হাউস অভ্যন্তরীণ নির্দেশনায় ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের বলা হয় যে কোনো ধরণের শরণার্থী ও আশ্রয় সিদ্ধান্ত আপাতত বন্ধ রাখতে। ফলে লাখো আশ্রয়প্রার্থীর মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত আটকে গেছে। এতে করে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যত ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয় গ্রীনকার্ডধারীদেরও আবেদন স্থগিত রাখা হয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় ১৯ টি দেশের সাথে আরো একাধিক দেশকে যুক্ত করার পরিকল্পনাও করছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। 

ইবি-৩, পরিবারভিত্তিক গ্রিন কার্ড, এমনকি কিছু ডাইভারসিটি ভিসাধারীও প্রশাসনিক ক্লিয়ারেন্সের নামে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষায় পড়ে গেছেন। কনস্যুলার প্রক্রিয়ায় ‘সিকিউরিটি রিভিউ’ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবেদনকারীরা মাসের পর মাস সাক্ষাৎকার পাচ্ছেন না। আরও কঠোর হয়েছে ভ্রমণ–নিষেধাজ্ঞা; মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে ভিসা–নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, ফলে অস্থায়ী ভ্রমণ অনুমতি বা অ্যাডভান্স প্যারোল এবং ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন একপ্রকার ঝুলে গেছে।

অনথিভুক্ত ও অ-নাগরিক অভিবাসীদের ওয়ার্ক পারমিট এর মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ মাস করা হয়েছে। এছাড়াও এর আগে ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফি ধার্য করা হয়েছিলো।

অভিবাসন ব্যবস্থায় কঠোর অভিবাসন নীতিতে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে আইন পাসে উদ্যোগ নিয়েছে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ও সিনেটররা। সিনেটে বিল পাসে প্রস্তাবিত অ্যাসাইলাম সিকিউর অ্যাক্ট, যেটি আশ্রয়প্রার্থীকে সীমান্তে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ডিটেনশনে রাখার বাধ্যবাধকতা সুযোগ থাকবে। হাউসে উঠেছে ম্যানডাটরি রিমুভাল অ্যাক্ট, যেখানে অপরাধের অভিযোগ পেলেই অভিবাসীকে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বহিষ্কারের পথ তৈরি করা হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রিন কার্ড আবেদনে নিরাপত্তা যাচাই আরও কঠোর করার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি রিফর্ম বিল। যার মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিন কার্ড প্রাপ্Í ও আবেদনকারীদের আরো কঠোরভাবে যাচাই করা হবে এবং কোন তথ্যের অমিল,  প্রতারণা বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন ঝুঁকি থাকলে ওই গ্রীন কার্ড বা আবেদন বাতিল করা যাবে দ্রুত। গত সপ্তাহে রিপাবলিকান সিনেটর দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল সংক্রান্ত একটি বিল প্রস্তাব করেছেন। এটি পাস হলে অভিবাসী আমেরিকানরা শুধু মাত্র আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে থাকতে পারবেন না।

একাধিক অভিবাসন বিচারক বরখাস্তের পর ডিপোর্টেশন জাজ নিয়োগে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ অভিবাসন প্রত্যাশীদের দুশ্চিন্তা প্রকট করেছে। 

অপরদিকে ডিন্যাচারালাইজেশন সিটিজেনদের আটক ও নাগরিকত্ব বাতিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির জন্য সিনেট ও হাউসের একাধিক রিপাবলিকান সিনেটর এবং কংগ্রেস একটি বিল পাসের উদ্যোগ নিচ্ছেন। 

ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর অভিবাসন নীতি প্রয়োগে যুক্তি দিচ্ছে বর্তমান ব্যবস্থা ‘দুর্বল’, ‘অনৈতিক’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তাবিরোধী’। 

হোয়াইট হাউস বলছে, “পরিবারভিত্তিক অভিবাসন বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে, আশ্রয়প্রক্রিয়া অপব্যবহার হচ্ছে, আর ওয়ার্ক পারমিট মানবপাচারকে উৎসাহ দিচ্ছে।” 

এই কঠোরতার বাস্তব প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায়। বোস্টনের এয়ারপোর্ট থেকে আটক হওয়ার পর কলেজছাত্রী লুসিয়া লোপেজ বেলোজা মাত্র দুই দিনের মধ্যে হন্ডুরাসে ডিপোর্ট হয়ে যান, এমনকি আদালত তাকে ম্যাসাচুসেটসে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরও। তার আইনজীবী বলছেন, প্রশাসনকে পাওয়া যায়নি, ছাত্রীর অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর বিচারিক প্রক্রিয়া কার্যত অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে।

ইমিগ্রেশন বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ধারাবাহিক নীতি ও বিলগুলো শুধু অভিবাসীবান্ধব পরিবেশকে সংকুচিত করছে না; যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থার শতবর্ষের ধারণাকেও বদলে দিচ্ছে। আশ্রয়, গ্রিন কার্ড, ভিসা, ভ্রমণ সব একসঙ্গে স্থবির হয়ে পড়ায় লাখো লাখো পরিবার ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার