পরকীয়ার অভিযোগে শালিসে নির্যাতন, স্বামীও নেয়নি ঘরে, অতঃপর...
জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
পরকীয়ার অভিযোগে সামাজিক বিচারের নামে তৃপ্তি রায় নামের এক গৃহবধূকে মারধর ও অপমান করার পরদিন তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে- ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ কয়েকজনের নির্যাতন ও সামাজিক অপমান সহ্য করতে না পেরে তৃপ্তি রায় (২৩) আত্মহত্যা করেছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ দোপাইল গ্রামের পবিত্র চন্দ্র রায়ের সঙ্গে একই এলাকার তৃপ্তি রায়ের ‘সম্পর্ক’ আছে এমন গুজব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর সূত্র ধরে শনিবার সকালে পবিত্র রায়ের স্ত্রী কিরণ মালা তৃপ্তিকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। পরে বৈরচুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমুর উপস্থিতিতে পবিত্র রায়ের বাড়িতে শালিস বসানো হয়।
শালিসে চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু ও ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দিন পরকীয়ার অভিযোগ তুলেই তৃপ্তিকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এ সময় তৃপ্তিকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে অপমানও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শালিস শেষে গৃহবধূ তৃপ্তি রানীকে তার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে স্বামী যতিশ চন্দ্র রায় তাকে ঘরে তুলতে অস্বীকৃতি জানান।
পরদিন সকালে নওডাঙ্গা নয়াপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের পুকুরপাড়ের এক জাম্বুরা গাছে তৃপ্তি রায়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের স্বামী যতিশ চন্দ্র রায় বলেন, স্ত্রীকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে দিনভর নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনা মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আমি তাকে ঘরে তুলিনি। অপমান সইতে না পেরে হয়ত সে আত্মহত্যা করেছে।
তৃপ্তির বাবা শিরেন চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, মেয়েকে শালিসের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর থেকেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে জামাই খবর দেয় মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বৈরচুনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার বলেন, এ ব্যাপারে কিছু বলব না। থানায় এজাহার হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে।
ঘটনা সম্পর্কে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটি আত্মহত্যা, নাকি কোনো ধরনের প্ররোচনা বা হত্যার ঘটনা সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।