৪ দিন আগে চাকরি পান গৃহকর্মী, প্রকাশ্যে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের নিজ বাসায় মা ও মেয়েকে ছুরি মেরে হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন এক নারী ওই বাসায় চারদিন আগে অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
আনুমানিক ২০ বছর বয়সী ওই নারী স্বাভাবিকভাবে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে কাজে এসেছিলেন বোরখা পরিহিত অবস্থায়, আর প্রায় দুই ঘণ্টা পর বেরিয়ে যান স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। মাঝের সময়টিতেই ওই বাসায় খুন হন মা-মেয়ে, পরে খবর পেয়ে শাহজাহান রোডে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বিপরীত পাশের আবাসিক ভবনের সপ্তম তলার ওই বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত লায়লা আফরোজের বয়স ৪৮ বছর। আর তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের বয়স ১৫ বছর। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আর মা লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিনী। দুজনের শরীরেরই একাধিক স্থানে এলোমেলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন থাকার কথা বলেছে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার এক কর্মকর্তা বলেন, হত্যার ঘটনার সময়রেখার সবচেয়ে সেনসিটিভ অংশ ওই দুই ঘণ্টা। কে ভেতরে প্রবেশ করেছে, কে বের হয়েছে—সবই যাচাই করা হচ্ছে। গৃহকর্মী বাদে কেউ বাড়ির পেছন দিয়ে প্রবেশ করেছিলো কিনা, কিংবা ঘটনার সময় বাড়ির সামনে কারো উপস্থিতি রহস্যজনক কিনা আমরা সব তদন্ত করে দেখছি। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিহত মেয়ে নাফিসার বাবা এ জেড আজিজুল ইসলাম পেশায় উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ওই বাসায় প্রায় ১৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।
প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল সাতটার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আজিজুল। স্কুলে পরীক্ষা চলমান থাকায় বাসায় ফিরেন তাড়াতাড়ি। বেলা ১১ টার দিকে ফিরে বাসার এসে তিনিই প্রথম স্ত্রী-কন্যার লাশ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে আশেপাশের বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন, খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
গৃহকর্তা আজিজুল বাসায় এসে প্রথমে দরজায় কড়া নেড়ে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে, দেখতে পান দরজা খোলা। প্রথমে তিনি প্রবেশ করে ড্রইং রুমে মেয়ে নাফিসার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং পাশের রুমে একটু দূরে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান।
বেঁচে থাকতে পারে ধারণা করে অন্যান্য প্রতিবেশিদের সহায়তায় মেয়েকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন আজিজুল, সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লায়লা আফরোজের লাশ উদ্ধার করে।
সরেজমিনে ওই বাসাটিতে গিয়ে দেখা যায়, লিফটের সামনে থেকে বাসার দরজা পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দরজা খুলতেই বাসায় আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে, মেঝেতে এবং দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে তাদের ধারণা, বাসা থেকে কিছু খোয়া যেতে পারে।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সকাল ৭ টা ৫১ মিনিটে বোরখা পরিহিত অবস্থায় ওই বাসায় প্রবেশ করেন মাত্র চারদিন আগে কাজে যোগ দেওয়া আয়েশা। আর ৯ টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে নির্বিঘ্নে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ওই স্কুলড্রেসটি ছিল খুন হওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসার।
ওই বাসা থেকে পুলিশ দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে। হত্যাকারী ঘটনার পর বাসার বাথরুমে ফ্রেশ হয়েছেন, এমন আলামত পাওয়ার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখন পর্যন্ত খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ওই গৃহকর্মীরই জড়িত থাকার বিষয়টি ধারণা করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ইবনে মিজান বলেছেন, ঘটনার আগে-পরে ওই বাসায় একজনের আসা যাওয়াই দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আমরা একজনই দেখেছি, পরে দেখব আশেপাশে আরও কেউ ছিল কি না। পরে জানতে পারব তার সাথে আশেপাশে কেউ ছিল কি না।
আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের একজন কাজের মহিলার দরকার ছিলো। সাধারণত গেটে অনেকেই কাজের সন্ধানে আসেন। আমরা দারোয়ানকে এমন কেউ আসলে জানানোর কথা বলে রেখেছিলাম। চার দিন আগে একটি মেয়ে কাজের সন্ধানে আসে। বোরকা পরিহিত অবস্থায় ওই মেয়েটি আসলে দারোয়ান তাকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়৷ এরপর আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা।
লায়লা ও নাফিসাকে হত্যা, সামনে এলো আঁতকে ওঠার মতো তথ্য
তিনি আরও বলেন, আয়েশা তাদেরকে জানিয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে, জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে, তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে। স্থায়ী গৃহকর্মী না হওয়ায় তার কোন কাজপত্র রাখা হয়নি। কাজ শুরুর পর প্রথম দুইদিন সময় মতোই এসেছে, গতকাল এসেছিল সাড়ে ৯টার দিকে। সোমবার সকাল ৭ টার পর যখন ওই বাসায় যাওয়ার জন্য আসে, স্বাভাবিকভাবেই বাসার নিরাপত্তাকর্মী খালেক তাকে ভেতরে যেতে দেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় স্কুলড্রেস পরে যাওয়ার সময় তার মুখে মাস্ক থাকায় গেটে দায়িত্বরত থাকা খালেক চিনতে পারেননি। তারপরেও গেট থেকে বের হওয়ার পর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে, সে সপ্তম তলার ‘৭বি’ ফ্ল্যাটে থাকেন বলে চলে যান। সেটি আজিজুলেরই ফ্ল্যাটের নম্বর, সেখানেই গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।
ঘটনার পর দারোয়ান খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সে জানিয়েছে, চারদিন আগে বাসায় কাজের জন্য আসায় মহিলাকে ওই ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওই মহিলা তার পূর্বপরিচিত নন।