মা-মেয়েকে হত্যা, সামনে এলো আঁতকে ওঠার মতো তথ্য
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যের কারণ এখনও জানা যায়নি।
তবে, তাদের সুরতহাল প্রতিবেদনে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য এসেছে।
দুজনের সুরতহালে দেখা যায়, নিহত আফরোজার শরীরজুড়ে ৩০টি জখমের চিহ্ন। আর তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫) গলায় ৪টি গভীর আঘাতের ক্ষত।
এরমধ্যে আফরোজার বাম গালে ৩টি, থুতনিতে ৪টি, গলার নিচে বাম পাশে ৫টি, বাম হাতে ৩টা, বাম হাতের কব্জিতে ১টি, ডান হাতের কব্জিতে ২টি, বুকের বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম পাশে ২টা ও তলপেটের নিচে একটি জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
অপরদিকে নাফিসার বুকের দুই পাশে ৪টি গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারালো ছুরিকাঘাতে ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমন সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেখেননি। হত্যার ধরন ও নৃশংসতা দেখে ঘাতককে প্রশিক্ষিত বলে ধারণা করছেন তারা।
পুলিশের একটি সূত্রে জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বাসা তল্লাশি করে বাথরুমে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার ও একটি ধারালো চাকু পাওয়া যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাফিসার বাবা সকাল ৭টায় স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে বাসায় ঢোকে গৃহকর্মী আয়েশা। ঠিক দুই ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মেয়ের স্কুলড্রেস পরে, কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে যায়। বের হয়েই বাসার সামনে একটি অটোরিকশা নিয়ে উল্টো পথে চলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফেরেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাসা তল্লাশিতে বাথরুম থেকে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার ও একটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ছুরিগুলো দিয়ে মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, মাকে হত্যার পর মেয়ে দৌড়ে ইন্টারকমে সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইন্টারকমের লাইন কাটা থাকায় যোগাযোগ করতে পারেনি। খুব ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে গৃহকর্মী। পরে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে নির্দ্বিধায় বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাসায় একজন কাজের মহিলা দরকার ছিল। আমরা বাড়ির দারোয়ানকে বলেছিলাম কেউ কাজ চাইতে এলে যেন বাসায় পাঠায়। চার দিন আগে বোরকা পরা একটি মেয়ে কাজের জন্য এলে দারোয়ান তাকে আমাদের কাছে পাঠায়। স্ত্রী কথা বলে তাকে কাজে রাখে। তবে মেয়েটির বিস্তারিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্ত্রীর কাছ থেকে শুনেছি, মেয়েটির নাম আয়েশা। গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পর সে চাচা-চাচির সঙ্গেই থাকে। তার শরীরেও পোড়ার ক্ষত রয়েছে সেটি স্ত্রীকে দেখিয়েছে।’
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায়। মনে হচ্ছে কিছু খোয়া যেতে পারে। তবে তেমন কিছু নেওয়া হয়নি শুধু নিহত মহিলার মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে এবং হত্যাকারী বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়েছে এমন প্রমাণও মিলেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে তারা বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে জানতে পারেন, এক গৃহকর্মী মা-মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।