ভূমিকম্পের মাত্রা, গভীরতা ও অবস্থান যেভাবে নির্ণয় করা হয়
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪০ পিএম
বাংলাদেশেসহ বিশ্বের অনেক দেশে সম্প্রতি ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না ভূমিকম্পের মাত্রা, গভীরতা এবং অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা হয়।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে ভূমিকম্প নির্ণয়ের পুরো প্রক্রিয়ার তথ্য তুলে ধরেছে।
এতে বলা হয়, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ভূমিকম্প হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সারাবিশ্বের সিসমিক নেটওয়ার্ক তা শনাক্ত করে ফেলে। আমরা যে ভূমিকম্পের মাত্রা, গভীরতা এবং অবস্থান দেখি– এর পেছনে রয়েছে অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক ও নির্ভুল হিসাব-নিকাশ।
ভূমিকম্প কারা শনাক্ত করে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার সিসমোমিটার বা সিসমিক স্টেশন ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্র, যা মাটির ক্ষুদ্রতম কম্পনও রেকর্ড করে। প্রখ্যাত ভূমিকম্প মনিটরিং সংস্থাগুলো হলো— USGS (যুক্তরাষ্ট্র), EMSC (ইউরোপ), GFZ (জার্মানি), BMD (বাংলাদেশ), JMA (জাপান)।
ভূমিকম্প হলে কী কী ঘটে?
ভূমিকম্পের পরে মাটির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গ তৈরি হয়। P-Wave (Primary wave) – সবচেয়ে দ্রুত আসে, S-Wave (Secondary wave) – পরে আসে এবং Surface Wave – সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। প্রতিটি সিসমিক স্টেশন এই তরঙ্গগুলোর আগমনের সময় (arrival time) মাপতে থাকে।
কীভাবে ভূমিকম্পের অবস্থান বা epicenter নির্ণয় করা হয়?
একটি স্টেশন থেকে শুধু জানা যায় ভূমিকম্প কত দূরে হয়েছিল, কিন্তু কোথায় হয়েছিল তা জানা যায় না। তাই অন্তত তিনটি সিসমিক স্টেশন প্রয়োজন হয়।
ভূমিকম্প নির্ণয়ের ধাপগুলো হলো-
১. প্রতিটি স্টেশনে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি তরঙ্গের আগমনের সময়ের পার্থক্য মাপা হয়।
২. এই সময় ব্যবধান থেকে স্টেশন থেকে ভূমিকম্পের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়।
৩. তিনটি স্টেশনের দূরত্ব দিয়ে একটি triangulation বা ত্রিভুজ তৈরি করা হয়।
৪. তিনটি বৃত্ত যেখানে মিলিত হয় সেই বিন্দুই হলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র (Epicenter)।
এই পদ্ধতিটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে নির্ভুল।
ভূমিকম্পের মাত্রা (Magnitude) কীভাবে নির্ণয় হয়?
ভূমিকম্প কত শক্তিশালী ছিল, সেটি বোঝা যায় তার মাত্রায়। আজকের বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্কেল হলো Mw — Moment Magnitude Scale। এটি নির্ণয় করা হয় মূলত সিসমিক তরঙ্গের অ্যাম্পলিটিউড, তরঙ্গের সময়কাল, ফাটল কত বড় ছিল ও ভূত্বকের মধ্যে কত শক্তি মুক্ত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। এতে কম্পনের উচ্চতা (wave amplitude) যত বেশি হবে, মাত্রাও তত বেশি হবে।
ভূমিকম্পের গভীরতা (Depth) কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
সিসমিক তরঙ্গের আগমনের ধরন বিশ্লেষণ করে ভূমিকম্প কত গভীরে হয়েছিল তা নির্ণয় করা হয়। এটি নির্ভর করে মূলত বিভিন্ন স্টেশনে P ও S তরঙ্গ কখন পৌঁছাল, সময়ের পার্থক্য কত ও তরঙ্গের গতি মডেল (Earth velocity model) অনুযায়ী।
গভীর ভূমিকম্পে P ও S তরঙ্গের পার্থক্য কম হয়, আর অগভীর ভূমিকম্পে এই পার্থক্য বেশি হয়। এবং উন্নত অ্যালগরিদম (Hypocenter location algorithms) ব্যবহার করে নির্ভুল গভীরতা বের করা হয়।
কত দ্রুত এই তথ্য পাওয়া যায়?
USGS/EMSC: প্রথম রিপোর্ট আসে ১–২ মিনিটে। GFZ: ২–৫ মিনিটে এবং BMD: সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যে। পরে ডেটা আরও বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট refine করা হয়।
কেন মাঝে মাঝে পরে magnitude পরিবর্তন হয়?
কারণ প্রাথমিক ডেটা সীমিত স্টেশন থেকে আসে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরও বেশি ডেটা যোগ হলে গণনাটি আরও নির্ভুল হয়। এজন্য initial magnitude পরে reviewed magnitude দিয়ে আপডেট করা হয়।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আমরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার অবস্থান, গভীরতা ও শক্তি জানতে পারি। পৃথিবীর হাজারো সিসমিক স্টেশন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। যার কারণে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আজ আমরা দ্রুত তথ্য পাই।