Logo
Logo
×

জাতীয়

পে-স্কেল নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা কেন?

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

পে-স্কেল নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা কেন?

সরকারি কর্মচারীদের নবম পে-স্কেল ঘোষণার দাবিতে চলমান কর্মসূচিকে ঘিরে ভোটের আগে দেশে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সরকারের একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় সতর্ক করেন সংস্থাটির প্রধান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আলোচনায় পে-স্কেল থেকে শুরু করে নির্বাচনী নিরাপত্তা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক-বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সভায় বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতনবিষয়ক অস্থিরতা দ্রুত সমাধান না হলে ভোটের আগে এ নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে দ্রুততম সময়ে পে-স্কেল ইস্যু থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ না করারও সুপারিশ করেন।

সভায় সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বলেন, জুলাইয়ের স্মৃতিচিহ্নগুলো পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুরাতন গণভবন, যা জুলাই স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটিও গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি পাচ্ছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানের পতাকা অবমাননার ইস্যুই সভায় উঠে আসে। একটি বাহিনীর প্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে অবমাননাকর আচরণ দেখা যাচ্ছে। এসব আচরণ চলতে থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ঢাকার কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনে শিক্ষকরা ইন্ধন দিচ্ছেন। সাত কলেজের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি। কলেজগুলোর সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবং ছাত্র–ছাত্রীদের আলাদা ক্যাম্পাসের পক্ষে মত দেন তিনি।

সভা শেষে ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। ভোটকেন্দ্রে আলো নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ভোট হবে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে। ভোট গণনা পর্যন্ত যাতে আলোর সমস্যা না হয়, সে জন্য ব্যাকআপ লাইটিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে একের পর এক সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, আমি অস্বীকার করি না। আর নির্বাচনের আগে সব বন্ধ হয়ে যাবে-এমন নিশ্চয়তাও দিতে পারি না। আমার কাছে কোনো ম্যাজিক নেই।”

গণভবন মিউজিয়াম খোলাসংক্রান্ত প্রস্তুতির কথাও জানান উপদেষ্টা। দর্শনার্থীর নিরাপত্তা ও প্রবেশব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন নিয়েও সাধারণ মানুষের সংশয় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যদি প্রচার করেন নির্বাচন হবে, তাহলে মানুষের সন্দেহ দূর হবে। আপনাদের প্রচার হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।”

জাতীয় পার্টি নির্বাচনী মাঠে সমান সুযোগ পাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না? সবাইকে মাঠেই দেখা যাচ্ছে।”

লুট করা অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে। নির্বাচনে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের কথাও জানান তিনি।

এদিকে, সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ ঘোষণা করেছে-আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ না হলে সারা দেশে কর্মবিরতিতে যাবে তারা। গত শুক্রবার জাতীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। তাঁদের দাবি, জানুয়ারি থেকেই নতুন পে-স্কেল কার্যকর করতে হবে।

ভোটের আগে এ ইস্যুতে উত্তাপ বাড়ছে, আর সরকারি বেতন কাঠামোর দাবিতে লক্ষাধিক কর্মচারীর চোখ এখন সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার