ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের চেয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষকের বেতন বেশি!
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫ পিএম
এমপিওভুক্ত বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন বিদ্যালয়ে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা ও বেতন গ্রেড নিয়ে নতুন নিয়ম করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষককে ১১তম গ্রেড এবং হিন্দু ধর্ম শিক্ষা শিক্ষককে দশম গ্রেড দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শিক্ষকরা।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। নীতিমালার পরিশিষ্ট-ঘ-তে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নিয়োগ-যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বেতন স্কেল বিষয়ক অংশে এ নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা-বেতন
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে স্বীয় ধর্মের অনুসারী হতে হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে ফাজিল ডিগ্রি বা ন্যূনতম ৩০০ নম্বরের আরবি বা ইসলামি শিক্ষাসহ স্নাতক ডিগ্রি।
প্রার্থীর বয়স হতে হবে অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর। এসব যোগ্যতা নিয়ে নিয়োগ পাওয়া ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেড হবে ১১তম (১২৫০০-৩০২৩০ টাকা)।
হিন্দু ধর্মের শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা-বেতন গ্রেড
হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রার্থীকে স্বীয় ধর্মের অনুসারী হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দুই ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। দুই ধরনের প্রার্থীর বেতন গ্রেডও ভিন্ন। ক. উপাধি ডিগ্রিসহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান। আর খ. সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান।
ক ধারায় বর্ণিত উপাধি ডিগ্রিসহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী পাবেন দশম গ্রেড। আর খ ধারায় বর্ণিত সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী পাবেন ১১তম গ্রেড।
বেতন গ্রেডের বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ
একই পদে দুই ধরনের বেতন গ্রেড রাখায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তারা এটিকে বৈষম্য হিসেবে অভিযোগ তুলছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী এ বৈষম্য দূর করতে নতুন এমপিও নীতিমলা সংশোধন করে দুই ধর্মের শিক্ষককেই দশম গ্রেড দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, সহকারী শিক্ষক (ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১১তম গ্রেড এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষকের ক্ষেত্রে দশম গ্রেড দেওয়া হয়েছে। এটি চরম বৈষম্য। এটি মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের প্রতি এ অবহেলা কেন? অবিলম্বে বৈষম্য দূর করে নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। সকল সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটির আহ্বায়ক মো. রাশেদুল আলম বলেন, নতুন নীতিমালা ইসলাম শিক্ষা ও ধর্ম শিক্ষার সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেডে যে বৈষম্য করা হয়েছে, তা রীতিমতো সরকারকে বিপদে ফেলার পাঁয়তারা বলেই প্রতীয়মান হয়। তা না হলে এ নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে? আমরা এর যথাযথ ব্যাখ্যাসহ অবিলম্বে এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
যা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতার কারণে দুই ধরনের যোগ্যতায় দুই রকম গ্রেড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে কেউ নাম প্রকাশ করে গণমাধ্যমে এ নিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব বলেন, এখানে ধর্ম-বর্ণ মুখ্য বিষয় নয়। নীতিমালায় ইসলাম শিক্ষা ও ধর্ম শিক্ষার শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১১তম গ্রেড আছে। তবে যদি উপাধি বা বিএড/সমমান ডিগ্রি থাকে, তাকে আপনি ১১তম গ্রেডে রাখতে পারবেন না। এজন্য উপাধিসহ স্নাতক ডিগ্রিধারী কেউ হিন্দু ধর্মের শিক্ষক হলে তিনি দশম গ্রেড পাবেন।
‘আর শুধু সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি থাকলে হিন্দু ধর্মের সহকারী শিক্ষকও ১১তম গ্রেড পাবেন। একইভাবে ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফাজিল ডিগ্রি থাকায় তিনি ১১তম গ্রেড পাবেন। এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে গ্রেডের তারতম্য রাখতে বাধ্য হয়েছে মন্ত্রণালয়’ যোগ করেন ওই উপসচিব।
আগের নীতিমালায় ধর্ম শিক্ষকদের গ্রেড যেমন ছিল
২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ভেদে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার সহকারী শিক্ষকরা দশম ও ১১তম গ্রেড পাচ্ছেন। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে ফাজিল ডিগ্রি ও বিএড ডিগ্রি/সমমান থাকলে তিনি দশম গ্রেড পেতেন। আর শুধু ফাজিল ডিগ্রি/সমমান থাকলে তিনি ১১তম গ্রেড পেতেন।
একইভাবে হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে উপাধি ডিগ্রিসহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান অথবা সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি ও বিএড ডিগ্রি/সমমান থাকলে হিন্দু শিক্ষার শিক্ষককে দশম গ্রেড দেওয়া হতো। আর শুধু সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান যোগ্যতার প্রাথীকে ১১তম গ্রেড দেওয়ার নিয়ম ছিল।
একইভাবে বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে পালি বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান ও বিএড ডিগ্রি থাকলে দশম এবং পালি বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমান থাকলে ১১তম গ্রেড দেওয়া হতো।
খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে থিওলজিক্যাল কোর্স সম্পন্নকরণসহ স্নাতক ডিগ্রি ও বিএড ডিগ্রিধারীদের দশম গ্রেড এবং থিওলজিক্যাল কোর্স সম্পন্নকরণসহ স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ১১তম গ্রেডে রাখা হয়েছিল।