আবু বকরের অসহায় জীবন দেখে কাঁদলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
কুমিল্লার দেবীদ্বারে গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে ভয়াবহ হামলার শিকার হয় ১৬ বছরের মাদরাসা শিক্ষার্থী আবু বকর। একসময়ের প্রাণচঞ্চল ছেলেটি আজ নিজ বাড়িতে বাকহীন, নিথর-নিশ্চুপ আর অসহায় জীবন কাটাচ্ছে। আবু বকর বর্তমানে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার শাকতলা গ্রামের নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন। এক সময়ের হাসিখুশি ছেলেটি এখন নিঃশব্দ জীবনের বন্দি।
গতকাল শনিবার আবু বকরকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আবু বকরকে এই অবস্থায় দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর চোখ ভিজে যায়। দুই চোখের কোণ বেয়ে ঝরতে থাকে পানি। একসময় কাঁদতে কাঁদতে আবু বকরকে জড়িয়ে ধরেন।
এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ আবু বকরকে বলেন, ‘তুমি যেকোনো সময়, শুধু এই নির্বাচন ইলেকশন না, যেকোনো সময় আমি যেমন ছিলাম আমাকে পাবা। তুমি আমার ভাই, আমার তো ভাই নাই।
আজকে আমরা এইখানে আসছি তোমাদের জন্য। তোমাদের ওপর ভিত্তি করে আমরা দাঁড়ায় আছি। তোমাদের জন্য অনেক কিছু করার কথা ছিল আমরা পারিনি।’
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছোট আলমপুর থেকে দেবীদ্বার কলেজ রোড হয়ে নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরের দিকে যাচ্ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশাল একটি মিছিল। তাদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালায়।
তখন আহত হয় আবু বকরসহ কয়েকজন। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা আবু বকরকে বেশ কয়েকজন একসাথে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে মৃত ভেবে কালাচান সুপার মার্কেটের অদূরে ফেলে রেখে যায়। মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত আবু বকরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়।
আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজ, পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং সর্বশেষ ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মাথার খুলি খুলে রেখে একাধিকবার অপারেশন করা হয়। অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় দুইবার আইসিইউতে রাখা হয় তাকে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকরা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সম্প্রতি সে তার গ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করছে।
কুমিল্লা দেবীদ্বারের রাজামেহার ইউনিয়নে গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের দেখে আবেগে অশ্রুসিক্ত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে অনুষ্ঠিত এই গণসংযোগে স্থানীয় জনগণ ও শহীদ পরিবাররা তাকে নির্বাচনী খরচের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানান।