Logo
Logo
×

জাতীয়

ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করলেন ওটি বয়, অতঃপর...

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম

ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করলেন ওটি বয়, অতঃপর...

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ওটি বয়ের বিরুদ্ধে এক নারীর স্তন ক্যানসার বা টিস্যু সংক্রামক পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় টিস্যু সংগ্রহের ১৫ দিনের মাথায় মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণের কারণে ভুক্তভোগী ওই নারীর একটি স্তন (অঙ্গ) কেটে ফেলতে হয়েছে। 

এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করেন ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটরের কর্মচারী (ওটি বয়) শেখ নিয়ামুল (২৬)।

ভুক্তভোগী ববিতা বেগম ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী। তার ৭ বছর ও এক বছরের সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি শহরের ঝিলটুলী এলাকার সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের টিস্যু সংগ্রহের জন্য চিকিৎসক দ্বারা একটি ফাঁপা সুচ ব্যবহার করে স্তনের পি-বা অস্বাভাবিক জায়গা থেকে কোষ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী, ওই অঙ্গে অস্ত্রোপচারও করা লাগতে পারে বলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান চিকিৎসক আতিকুর আহসান। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন বেসরকারি হাসপাতালের ওটি বয় নিয়ামুল।

ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসার নথিপত্র ও তার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর পূর্ব পরিচিত হাসপাতালের ওটি বয় শেখ নিয়ামুলের শরণাপন্ন হয়ে মা ময়না বেগমকে সাথে নিয়ে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে যান। এক পর্যায়ে এই চিকিৎসক নারীকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেন। পরে তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলেই হাসপাতালটির ওটি বয় নিয়ামুল তাকে সরকারি হাসপাতালে না যাওয়ার জন্য ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অল্প খরচে নিজেই কাজ করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগী নারী ববিতা বেগম জানান, ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরে নিয়ামুল এসে বলে মেডিক্যাল হাসপাতালে থাকতে হবে, অনেক ঝামেলা হবে। আমার এই কাজের অভিজ্ঞতা আছে, আমিই করে দেব। কোনো সমস্যা হবে না, সরকারি মেডিক্যালে গেলেও একইভাবে কাটবে। তখন ওকে বলেছিলাম (নারী), আমার দুটি বাচ্চা আছে, কোনো ক্ষতি যেন না হয়।এক পর্যায়ে ওটি রুমে নিয়ে নিয়ামুল একাই অপারেশন করে।

ভুক্তভোগী নারী আরও জানান, অস্ত্রোপচার শেষে সেখানে ৪টি সেলাই দেন এবং নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে প্রায় ১৬ দিন পরে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পান। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচার স্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা দেয়। তিনি গত ২ ডিসেম্বর পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানকে দেখাতে গিয়ে সবকিছু খুলে বলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে গত ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিনেই তার সংক্রামক স্তন্যটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে বিচারের দাবি করেন ববিতা বেগম।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুর আহসান বলেন, পুরো স্তন নয়, সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ওটি বয় শেখ নিয়ামুলকে দায়ী করেন। তিনি এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার জন্য ওটি বয়ের কোনো অধিকার নেই বলে উল্লেখ করেন।

অপরদিকে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ওটি বয় নিয়ামুলের বহুরুপী প্রতারণা। পরীক্ষাটি করানো হয় ঢাকা ধানমন্ডির গ্রীণরোড এলাকার এন এন ল্যাব নামক একটি ল্যাব থেকে। নমুনাটি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওটি বয় শেখ নিয়ামুল দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন।

ফরিদপুর সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সবার অজানায় সে (ওটি বয়) এই কাজটি করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরও তিনি ওই হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে এ ঘটনার খোঁজখবর নেবেন বলে জানান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার