প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি শোকজে উত্তপ্ত শিক্ষাঙ্গন
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৩ এএম
তিন দফা দাবি আদায়ে টানা কর্মবিরতি ও দুই দিনের কমপ্লিট শাটডাউনের পর কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে আজ রবিবার থেকে পরীক্ষাগ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় বার্ষিক ও তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা শর্তসাপেক্ষে পরিচালিত হবে। তবে দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি পরে ঘোষণা করা হবে।
সরকার-শিক্ষক টানাপড়েন : ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতির পর ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করলে শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এতে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও কোথাও উপজেলা প্রশাসন ও অভিভাবকদের সহায়তায় প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও তাতে অরাজকতা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেয়। কিন্তু শিক্ষকদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাপক বদলির পথে হাঁটে।
পাঁচ শতাধিক শিক্ষককে বদলি : গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা এক অফিস আদেশে আন্দোলনের শীর্ষ নেতাসহ ৫০০-৫৫০ জন সহকারী শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। শুধু নোয়াখালী জেলা থেকেই বদলি করা হয় ৪০ জন শিক্ষককে। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদকেও নোয়াখালী থেকে লক্ষ্মীপুরে বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি স্পষ্টতই শাস্তিমূলক বদলি। সারাদেশ থেকে আমাদের কাছে একই ধরনের তথ্য আসছে।
সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষকরা নিজ জেলায় পদায়ন পান; ভিন্ন জেলায় বদলি খুবই বিরল, যা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া প্রায় হয় না।
এক জেলার সব শিক্ষককে শোকজ : নোয়াখালী জেলার ২৪৩টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সেসব বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে। শোকজে বলা হয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশ অমান্য এবং বিদ্যালয় তালাবদ্ধ করেছেন, যা সরকারি কর্মচারী আইন ও শৃঙ্খলা বিধিমালার লঙ্ঘন। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
গ্রেড বৈষম্যই আন্দোলনের মূল কারণ : দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক, যাদের বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকরা ইতোমধ্যে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা এখনও ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন। বহু বছর ধরে চলমান এই বৈষম্য নিরসনই শিক্ষকদের তিন দফা দাবির অন্যতম প্রধান দাবি।
পরীক্ষা শুরু হলেও শান্তি ফিরবে কি?- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যদিও শিক্ষকরা রবিবার (আগামীকাল) থেকে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তবুও শিক্ষকদের ব্যাপক বদলি, শোকজ নোটিশ এবং আন্দোলন স্থগিত অবস্থার কারণে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। আলোচনার মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হলে আবারও কর্মসূচি শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।