Logo
Logo
×

জাতীয়

এনআইডি সংশোধন : আবেদন ফি পাঁচ হাজার টাকা আরোপের প্রস্তাব

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৬ এএম

এনআইডি সংশোধন : আবেদন ফি পাঁচ হাজার টাকা আরোপের প্রস্তাব

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি সর্বোচ্চ ৫০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। বর্তমানে যে আবেদন করতে ফি দিতে হয় ৪০০ টাকা, ওই প্রস্তাবে সেই আবেদনের ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আপিল বা রিভিশন আবেদনের জন্যও নাগরিকদের গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট। একজন নাগরিক তার এনআইডির তথ্য সংশোধনে যতবার আবেদন করবেন, ততবারই গুনিতক হারে বাড়তি ফি জমা দিতে হবে। বাড়তি এসব ফি অন্তর্ভুক্ত করে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহ) প্রবিধানমালা’ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে জন্মতারিখে সংশোধন কার্যক্রম মাঠপর্যায় থেকে বাদ দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কমিশনের ১০ম সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এজেন্ডায় রাখা হয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে এনআইডি’র তথ্য সংশোধনে বাড়তি ফি জনগণের মাথায় চাপবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, সাধারণত প্রতি মাসে কমবেশি ৮০ হাজার মানুষ এনআইডি’র তথ্য সংশোধনের আবেদন করেন। সঠিক সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি না করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তথ্য সংশোধন করে দেওয়ার নামে নাগরিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ফি আরোপ মানুষকে আরও ভোগান্তিতে ফেলবে বলে মনে করছেন খোদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। অবশ্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তথ্য সংশোধনের আবেদন সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাড়তি ফি আরোপ করা হচ্ছে। নতুন ফি আরোপের ফলে কথায় কথায় আবেদনের প্রবণতা কমে আসবে। এতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কাজ কমে যাবে।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর শুক্রবার বলেন, একবারেই বেশি ফি ধরা হচ্ছে না। একজন ব্যক্তি যতবার আবেদন করবেন, তত বেশি ফি আসবে। তিনি বলেন, অনেকেই ১০ বার তথ্য সংশোধনের আবেদন করেন। ওইসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে আমাদের অনেক সময় ব্যয় হয়। আমাদের দেশে মানুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ওই তুলনায় এনআইডি সংশোধনের জনবল কম। এ কারণে সব আবেদন সময়মতো নিষ্পত্তি করতে পারি না।

যখন বেশি ফি আরোপ করা হবে, তখন সবাই আবেদন করার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হবে। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে অনেক জায়গায় দেখেছি, শাস্তির চেয়ে জরিমানা বেশি করা হয়। এতে বিড়ম্বনা কমবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দিলে সার্ভারে তা জমা হবে না।

প্রস্তাবিত নতুন ফি : জানা গেছে, প্রবিধানমালায় বড় ধরনের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে তথ্য-উপাত্ত সংশোধনের ধরন ও আবেদন অনুযায়ী ৯টি ক্যাটাগরি করা হচ্ছে। কতদিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে-সেই সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সর্বনিম্ন সাত দিন থেকে দেড় মাস সময় দেওয়া হচ্ছে। যদিও বর্তমানে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হয় না।

নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে সর্বনিম্ন ফি ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। ভ্যাটসহ তা দাঁড়াবে ৩৪৫ টাকা, যা বর্তমানে রয়েছে ভ্যাটসহ ২৩০ টাকা। তথ্য সংশোধনের জন্য প্রথমবার কেউ আবেদন করলে এই ৩৪৫ টাকা ফি দিতে হবে। অর্থাৎ প্রথম আবেদনে খরচ বাড়বে ৫০ শতাংশ।

একই ব্যক্তি এনআইডির তথ্য সংশোধনে দ্বিতীয়বার আবেদন করলে তার ফি প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে ৭৫ টাকা ভ্যাট যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে দাঁড়াবে ৫৭৫ টাকা। বর্তমানে এ ফির পরিমাণ ৩০০ টাকা। ভ্যাটসহ তা দাঁড়ায় ৩৪৫ টাকা। খরচ বাড়বে ৬৬ শতাংশ।

বিদ্যমান নীতিমালায় দ্বিতীয়বারের পর যতবার আবেদন করবে প্রত্যেকবার ৪০০ টাকা ফি রয়েছে। বারবার আবেদন করলেও ওই ফির পরিমাণ বাড়ে না। প্রস্তাবিত নীতিমালা তৃতীয়বার থেকে যতবার আবেদন করবে ততই ফি বাড়বে। একই ব্যক্তি তৃতীয়বার সংশোধন আবেদন করলে ফি দিতে হবে ৮০০ টাকা। ভ্যাটসহ তা দাঁড়াবে ৯২০ টাকা। চতুর্থবার আবেদন ফি ভ্যাটসহ দুই হাজার ৩০০ টাকা, পঞ্চমবার আবেদন ফি তিন হাজার ৪৫০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবে তার ফি হবে পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা।

এবার আবেদনের দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, আপিল ও আরেকটি হচ্ছে রিভিশন। কোনো ব্যক্তি বারবার তথ্য সংশোধনের আবেদন করার পরও তা না হলে তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর আপিল করতে পারবেন। এই আপিল করার জন্য পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। সচিব যদি ওই আপিল নামঞ্জুর করেন তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে রিভিশন চেয়ে আবেদন করা যাবে। সেখানেও পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। বর্তমানে আপিল করার জন্য টাকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যদিও আপিল অনলাইনভুক্ত করা হয়, তখন একটা ফি দিতে হয়। নতুন নিয়মে আবেদন করলেই পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। ওই আবেদন গ্রহণ হতে পারে আবার বাতিলও হতে পারে।

বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সময় : প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় আবেদনের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী তা নিষ্পত্তির সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত আবেদনকারীর নিজের নাম, বাবা-মার নামে মুদ্রণজনিত ভুল, টিআইএন নম্বর বা মোবাইল ফোন নম্বর সংশোধনের আবেদনের ক্যাটাগরি হবে ‘ক-১’। আবেদন দাখিলের সাত দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবেন সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। নামের বানানে পরিবর্তন বা সংশোধন (পুরো নাম পরিবর্তন ছাড়া), জন্মস্থান পরিবর্তন, শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তনসহ বেশ কয়েক ধরনের তথ্য পরিবর্তনের আবেদন ‘ক’ ক্যাটাগরিতে পড়বে। ওই আবেদন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ১০ দিনের মধ্যে সমাধান করবেন। একইভাবে ‘খ-১’ ক্যাটাগরির আবেদন ১৪ দিনে অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ‘খ’ ক্যাটাগরির আবেদন ২১ দিনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ‘গ-১’ ক্যাটাগরির আবেদন ২১ দিনে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নিষ্পত্তি করবেন। আগে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষমতা ছিল না। প্রস্তাবে তাদের সংশোধন ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দেওয়া হচ্ছে। আর ‘গ’ ক্যাটাগরির আবেদন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। ‘ঘ’ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করবেন জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগের মহাপরিচালক নিজেই। প্রতিটি আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা ৪৫ দিন।

প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় জন্মতারিখ সংশোধনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষমতা ও এখতিয়ার জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকের হাতে রাখার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর ফলে জন্মতারিখ সংশোধন সংক্রান্ত হাজার হাজার আবেদনকারীকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আসতে হবে। হয়তো প্রমাণ দিতে হবে আবেদনের সপক্ষের কাগজপত্র। এতে তাদের সময়, অর্থ ও পরিশ্রম-সবই বাড়বে।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর শুক্রবার বলেন, জন্মতারিখ সংশোধন করে অনেকে বয়স কমিয়ে বা বাড়িয়ে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এতে ভোটার ডেটাবেসের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তাই বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে হয়তো কাজের চাপ বাড়বে। তবে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে আবেদনকারীদের হয়তো ঢাকায় আসতে হবে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার