Logo
Logo
×

জাতীয়

নভেম্বরে ৯৬ রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২, ১০জন বিএনপির অন্তর্কোন্দলে

এইচআরএসএসের মাসিক প্রতিবেদন

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৩ এএম

নভেম্বরে ৯৬ রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২, ১০জন বিএনপির অন্তর্কোন্দলে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় দুইজন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মনোনয়নকেন্দ্রিক সম্ভাব্য প্রার্থী এবং বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৬২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলীয় অন্তর্কোন্দলে ১২ জন নিহত ও ৮৭৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনই বিএনপির অন্তর্কোন্দলে মারা গেছেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটি।

এইচআরএসএসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত মাসে ৯৬টি রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে ৩৩টিই বিএনপির অন্তর্কোন্দল। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭৯ জন ও নিহত ১০ জন। এছাড়া ৯টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫২ জন, ৬টি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪১ জন, ১৫টি বিএনপি-অন্যান্য দলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫৫ জন এবং ২০টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। এতে আহত হয়েছেন ৯১ জন এবং নিহত হয়েছেন ১ জন। নিহত ১২ জনের মধ্যে বিএনপির ১১ জন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ১ জন।

এইচআরএসএস আরও জানায়, সারাদেশে ২৩টি ঘটনায় ৩৬ জন সাংবাদিককে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ২২ জন আহত, ১১ জন সাংবাদিককে হুমকি ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া দু’টি হয়রানিমূলক মামলায় ২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ এর অধীনে এ মাসে দায়েরকৃত ৭টি মামলায় ২৭ জনকে অভিযুক্ত ও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ মাসে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতির দিকে ছিল বলে এইচআরএসএসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এইচআরএসএসের তথ্যমতে, দেশে ২০টি গণপিটুনি ও মব সহিংসতায় ১৬ জনকে হত্যা ও ১১ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২ জনের মৃত্যু, কারাগারে ৩ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ও ৯ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

অপরদিকে ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারায় কমপক্ষে ৩৮টি মামলা হয়েছে। এ সকল মামলায় ১১৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৩০১ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এ মাসে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১৯৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১৭১৪ জন এবং বিএনপির নেতাকর্মী ৩৬ জন। এছাড়া সারাদেশে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৬ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

নভেম্বর মাসে শিশু ও নারী সহিংসতার প্রতিবেদনে এইচআরএসএস জানায়, ১৭৭ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৮ জন, যার মধ্যে ২৫ জন শিশু ও কিশোরী। একই সাথে ১৩ জন নারী ও কন্যা শিশু  সংঘবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। এমনকি ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ৩৬ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে ১১ জন শিশু। এছাড়া, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৯ জন, আহত হয়েছেন ৩২ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২৪ জন নারী। অন্যদিকে সারাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় ১০৩ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৮৩ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

একই সাথে নভেম্বর মাসে ২৫টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৪ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। তাছাড়া নভেম্বর মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩টি হামলার ঘটনায় বিএসএফ কর্তৃক একজন বাংলাদেশি নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের জলসীমা থেকে আরাকান আর্মি কর্তৃক ৪টি ট্রলারসহ ২৬ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচন আসার পূর্বেই রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলীয় অন্তর্কোন্দলে নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে মৃত্যু, রাজনৈতিক উত্তেজনা, নির্বাচনী সহিংসতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ— এসব বিষয় সমাধান করা না হলে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। এজন্য দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

মানবাধিকার রক্ষায় আরও জবাবদিহিমূলক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়ে ইজাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃঢ় হয় এবং মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার কার্যকরভাবে নিশ্চিত হয়।

এ সময় দেশের সার্বিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সকল নাগরিক, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতি অধিক সোচ্চার ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার