Logo
Logo
×

জাতীয়

কী দোষ করেছিল সাড়ে তিন বছরের সাবা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম

কী দোষ করেছিল সাড়ে তিন বছরের সাবা

নিষ্পাপ শিশু সাইমা আক্তার সাবা। বয়স মাত্র তিন বছর ৬ মাস। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে পারে সে। হতদরিদ্র ভ্যানরিকশাচালক সাইদুল ইসলামের ছোট্ট শিশুটি কী এমন দোষ করেছিল যে তাকে মেরে ফেলতে হলো।

প্রতিবেশী (ভ্যানচালকের) মাসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী শান্তনা খাতুন অবুঝ এই শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ আটক করেছে তাকে; কিন্তু কেন শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। সন্তানহারা মায়ের কান্নার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা অঞ্চলে। প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে হাজারও মানুষ। লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করে জড়িত ওই নরীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন তারা।

হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে ঝিনাইদহ জেলা শহরের পবহাটি গ্রামে।

সাইমার বাবা জেলা শহরের পবহাটি গ্রামের ভ্যানচালক (সাইদুল ইসলাম) জানান, বুধবার (৩ নভেম্বর) সকালে রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন মা। সাড়ে ৩ বছরের কন্যা সাইমা আক্তার সাবা ঘরে খেলা করছিল।

নিহতের মা অভিযোগ করেন, সাবাকে দেখতে না পেয়ে পাশের বাড়ি শান্তনার কাছে যান এবং সাবাকে দেখেছে কিনা জানতে চান। ধারণা ছিল গুটি গুটি পায়ে পাশের বাড়ি গেছে কলিজার ধন; কিন্তু না সময় গড়িয়ে যায়। দিনভর মাইকিংসহ পুকুর-নালা ডোবায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায় না তাকে। একপর্যায়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সাইদুল। পরবর্তীতে প্রতিবেশী মাসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী শান্তনা খাতুনের ঘর থেকে লাশ উদ্ধার হয় সাবার।

গ্রামবাসী জানান, রাত ৯টার দিকে অভিযুক্ত শান্তনা কাপড়ে মুড়িয়ে অতি গোপনে শিশুটির লাশ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। এ সময় রাস্তায় লোক চলাচল দেখে ফিরে যায় ঘরে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত অনুমান ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শান্তনার বাড়িঘর ঘিরে ফেলেন। তারা নিশ্চিত হন খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী পুলিশসহ যৌথবাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়। খাটের নিচ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেন তারা। এ সময় অভিযুক্ত শান্তনা খাটের উপরেই নিশ্চুপ বসা ছিল। তার চোখে-মুখে ছিল না কোনো অনুসোচনা কিংবা আতঙ্ক। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে (শান্তনা) পিটিয়ে হত্যার জন্য উদ্যত হন। ওই সময় সুকৌশলে আটক করে শান্তনা খাতুনকে থানায় নেওয়া হয়।

পুলিশের ধারণা, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে শিশু সাইমাকে। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেনি অভিযুক্ত শান্তনা খাতুন।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের পবহাটি এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে নিহত শিশুর লাশ নিয়ে অবরোধ করেন এলাকাবাসী। এতে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক অবরোধের কারণে চলাচলকারী যানবাহন আটকা পড়ে। শান্তনা খাতুনের ফাঁসির দাবিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন এলাকার লোকজন।

মানববন্ধনে নিহতের মা-বাবাসহ স্বজনরা ছাড়াও হাজারও নারী-পুরুষ-শিশু অংশ নেয়। একপর্যায়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসনে আরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং অভিযুক্তকে বিচারের আশ্বাস দেন। এরপর বেলা অনুমান দুপুর ২টার দিকে অবরোধ তুলে নেন এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নিহত শিশুর বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে আটক শান্তনা খাতুনকে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে (শান্তনা)। তার চার বছর বয়সের একটি ছেলে শিশুসন্তান রয়েছে এবং সে মাসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী। বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে।

সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কী কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা জানাননি ওসি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার