Logo
Logo
×

জাতীয়

অত্যাধুনিক যেসব সুবিধা রয়েছে কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭ পিএম

অত্যাধুনিক যেসব সুবিধা রয়েছে কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে

সবকিছু ঠিক থাকলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতার সরকারের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আগামীকাল লন্ডনে নেওয়া হতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য এয়ারবাস এ৩১৯ মডেলের এই উড়োজাহাজটি ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক সব ধরণের চিকিৎসা সুবিধা।

কাতারের রাজকিয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের উন্নত চিকিৎসা সক্ষমতার বিস্তারিত জানান। বিমানটিকে তিনি ফ্লাইং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'এই বিমানটি যেকোনো জরুরি অবস্থাতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেয়ার মতো প্রযুক্তিতে সজ্জিত যা ট্রানজিটের সময় রোগীর নিরবচ্ছিন্ন যত্ন নিশ্চিত করে।'

বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই উড়োজাহাজে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটর রয়েছে।

একইসঙ্গে যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে উড়োজাহাজটিতে।

এই বিশেষ উড়োজাহাজে থাকা চিকিৎসা কর্মীরা নির্বিঘ্ন চলাচলের মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী সেবা দিতে পারেন।

রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ডিজাইন

প্রথাগত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায়, এ৩১৯ এর প্রশস্ত কেবিনে চিকিৎসা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।

কাস্টমাইজড স্ট্রেচার, রোগীর ব্যক্তিগত জোন ও পরিবারের সদস্য বা বিশেষজ্ঞদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা করেন কাতারের রয়্যাল মেডিক্যাল ইউনিটের একটি চিকিৎসক দল, যেখানে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারা যাত্রার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে শুরু করে ট্রমা পর্যন্ত জরুরি অবস্থাগুলি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে সক্ষম।

আরাম ও সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা

নির্মাতা এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উন্নত ক্লাইমেট কনট্রোল ব্যবস্থা ও শব্দনিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাত্রার সময় রোগীর আরাম নিশ্চিত করা হয়।

এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থেকে চিকিৎসকরা বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ততক্ষণাৎ যোগাযোগ করতে পারেন।

এ ছাড়াও, চাপযুক্ত কেবিন অক্সিজেনের মাত্রা অনুকূল রাখে, যা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মেডিকেল এভিয়েশনে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এতে আর্থিকভাবে সামর্থবান গুরুতর অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

এয়ারবাসের দাবি, উন্নত এভিয়েশন প্রযুক্তির সঙ্গে চিকিৎসা অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে এই উড়োজাহাজটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবার নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। এটি নিশ্চিত করেছে, জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য কোনো দূরত্বই সক্ষমতার বাইরে নয়।

দীর্ঘ দূরত্বে ওড়ার সক্ষমতা

বেশি পরিমাণে জ্বালানি নিতে সক্ষম এ৩১৯ দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, যা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে রোগী পরিবহনের জন্য আদর্শ। ছোট রানওয়েতে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাতেও অবতরণ করতে সক্ষম এই উড়োজাহাজ।

সফরসঙ্গী

বিএনপি খালেদা জিয়ার এই সফরসঙ্গীর তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই তালিকায় আছেন, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, চিকিৎসক রিচার্ড জন বিল ও জিয়াউল হক।

এ ছাড়া, আরও থাকছেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।

প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

গত ১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'সবকিছু ঠিক থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল শুক্রবার ভোরে লন্ডনে নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'

গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকেরা জানান, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এরপর চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তবে, তিনি চিকিৎসা নিতে পারছেন বলে জানিয়েছেন ডা. জাহিদ।

এরই মাঝে গত ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' ঘোষণা করেছে সরকার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার