তারেক রহমান কবে ফিরছেন নিশ্চিত করলেন দলের তিন শীর্ষ নেতা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০১ পিএম
চলতি মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যদি এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জানান, আমরা আশা করছি, এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। তফসিল ঘোষণা হলেই তিনি দেশে চলে আসবেন। আর তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা জানান, আগামী ১২ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন। তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর কিছুটা নির্ভর করছে। প্রয়োজনে দু-এক দিন আগেও তিনি চলে আসতে পারেন।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল প্রতীক্ষিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটছে শিগগির। দলের শীর্ষ নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটি স্মরণীয় করে রাখার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল কেন্দ্র থেকে তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় জমকালো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না-ও হতে পারে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তিনি দেশের মাটিতে পা রাখবেন। এদিকে, তারেক রহমানের দেশে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে প্রবল আগ্রহ। আগামী ৭ ডিসেম্বর বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের বৈঠকের পর যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো কি না তা পর্যবেক্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন।’
এর আগে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে একই কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে দেখতে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন বলে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
২০০৭-০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে তারেক রহমানের ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন হয়েছিল। সেই সময় মৃত্যুর ঝুঁকির পাশাপাশি রাজনীতি থেকে তাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে। এমনকি তাকে দেশত্যাগেও বাধ্য করা হয়। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তারেক রহমান তার পরিবার নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর তাকে আর দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাই তার দেশে ফেরা নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
সম্প্রতি তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে তাকে ট্রাভেল পাস দেওয়া হতে পারে- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের এমন বক্তব্যের পর নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের যদি কোনো নাগরিকের পাসপোর্ট না থাকে বা হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া কারও যদি পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাস তাকে শুধুমাত্র দেশে আসার জন্য ট্রাভেল পাস দিয়ে থাকে।
তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে আসার প্রস্তুতি চলছে। লন্ডন দূতাবাসে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা জব্দ করেছিল। পরে আর ফেরত দেয়নি। নতুন পাসপোর্ট না থাকার কারণে তাকে ট্রাভেল পাস নিতে হচ্ছে। আশা করি, আবেদন করার এক দিনের মধ্যেই তিনি ট্রাভেল পাস পেয়ে যাবেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের ‘ট্রাভেল পাস’ চাইলে ইস্যু হবে। উনার পাসপোর্ট আছে কি না, এটা আমি বলতে পারব না।’
এদিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর বিশেষ নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় যা যা দরকার, সরকার তা দিতে প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’
মায়ের অসুস্থতা প্রসঙ্গে গত ৩০ নভেম্বর সকালে লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি লেখেন, এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’