Logo
Logo
×

জাতীয়

ভূমিকম্প ঝুঁকি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ দিনের ছুটি কতটা ফলপ্রসূ?

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

ভূমিকম্প ঝুঁকি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ দিনের ছুটি কতটা ফলপ্রসূ?

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর আবাসিক হলগুলোতে ঝুঁকি বাড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত ১৫ দিনের ছুটি শিক্ষার্থীদের স্বস্তি দিলেও জন্ম দিয়েছে নতুন প্রশ্নের। এই সাময়িক ছুটিতে কি ভবনের ঝুঁকি কমবে, নাকি ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের ফিরতে হবে সেই পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই?

ভূমিকম্পের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হলে সিলিংয়ের পলেস্তরা খসে পড়া, পুরোনো ফাটল চওড়া হওয়া এবং সিঁড়ি ও বাথরুমের কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় থাকা ভবনগুলোর জীর্ণ দশা ভূমিকম্পে আরও প্রকট হয়।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়ে প্রতিটি হল ও একাডেমিক ভবনের প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন, ঝুঁকি নিরূপণ এবং জরুরি মেরামত করা হবে। শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে সরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোতে প্রাথমিক হস্তক্ষেপ করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

অপর্যাপ্ত মনে করছেন শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞরা

তবে এই ছুটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন ফাঁকা থাকলে বড় ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা কমবে, কিন্তু ভবনের কাঠামোগত ঝুঁকি এত অল্প সময়ে কমানো সম্ভব নয়।

তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভবন ৫০ বছরের বেশি পুরোনো, যা আধুনিক ভূমিকম্প সহনশীল কোড মেনে তৈরি হয়নি। একটি ভবনকে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ করতে রেট্রোফিটিং, কলাম বিম শক্তিশালীকরণ এবং ভিত্তি পরীক্ষার মতো দীর্ঘমেয়াদি কাজ প্রয়োজন।

বুয়েট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের একটি দল জানিয়েছে, “ক্ষতি শুধু ফাটল দিয়ে বোঝা যায় না। অনেক সময় মূল ঝুঁকি থাকে কাঠামোর ভেতরে, যেটা চোখে দেখা যায় না।”

তাদের মতে, পরিদর্শনে ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করা গেলেও ভবন নিরাপদ করতে দীর্ঘ সময়, বাজেট এবং পরিকল্পিত সংস্কার প্রয়োজন। তাই ১৫ দিন কেবলই একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া, স্থায়ী সমাধান নয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলগুলোতে সারাবছরই দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব, পানি নিষ্কাশনের সমস্যা, দুর্বল সিঁড়িসহ নানা সমস্যা থাকলেও তা গুরুত্ব পায়নি। বড় কোনো ঘটনা ঘটলেই কেবল তড়িঘড়ি উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস ইফতেখার বলেন, “হল খালি রাখা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। এতে অন্তত বড় ভূমিকম্প হলে প্রাণহানির ঝুঁকি কমবে।”

তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মূল সমস্যা তো ভবনের দুর্বলতা। সেটা ঠিক না করলে ছুটি দিয়ে লাভ কী?”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমরা নিরাপত্তা চাই। ক্লাস পরীক্ষার চেয়ে জীবন আগে। প্রশাসন দ্রুত কাজ শুরু করেছে, এটা ভালো।”

তিনি যোগ করেন, “কিন্তু ১৫ দিনের পরে আমরা কতটা নিরাপদ থাকব, সেটা নিয়েই উদ্বেগ বেশি।”

প্রশাসনের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তারা চারটি উপকমিটি ও একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। কোন কোন হলে তাৎক্ষণিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং কোথায় জরুরি মেরামত প্রয়োজন, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা জানান, চলমান ছুটির মধ্যে তারা সবচেয়ে জরুরি অংশগুলো মেরামতের চেষ্টা করবেন।

“যেসব স্থাপনা তাৎক্ষণিকভাবে বিপজ্জনক, সেগুলোর কোনো অংশ প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদে ভবনের স্থায়িত্ব বাড়াতে বড় ধরনের সংস্কার প্রকল্প নেওয়া হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় একটি ‘দীর্ঘমেয়াদি সিসমিক সেফটি প্ল্যান’ তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ছুটি শিক্ষার্থীদের মানবিক ঝুঁকি কমালেও কাঠামোগত ঝুঁকি কমাতে দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই ছুটি সেই আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে, তবে সত্যিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবনগুলোকে আধুনিক মানে উন্নীত করার বিকল্প নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার