Logo
Logo
×

জাতীয়

বাংলাদেশে আরেকটি ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখার অস্তিত্ব শনাক্ত!

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম

বাংলাদেশে আরেকটি ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখার অস্তিত্ব শনাক্ত!

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে নতুন একটি সক্রিয় ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে শুরু হয়ে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফাটলরেখাটি বিস্তৃত, যা সর্বোচ্চ ৬ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটাতে সক্ষম।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুল আহসানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক ও বাংলাদেশের গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এই গবেষণা পরিচালনা করে। সম্প্রতি শেষ হওয়া এই গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল আগামী ১৪ থেকে ১৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

গবেষক দলটি ‘টেকটোনিক জিওমরফলোজি’ নামক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাটলরেখাটি শনাক্ত করেছে। গবেষক আক্তারুল আহসান জানান, ফাটলরেখাটিকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে, যার একটিতে স্বল্প, একটিতে বেশি এবং অন্যটিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই। তবে কোন অংশের ঝুঁকি কেমন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গবেষণাপত্রটি প্রতিষ্ঠিত জার্নালে প্রকাশের পর জানানো হবে। 

ভূতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এই ফাটলরেখার জন্ম হয়েছিল। এরপর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বছর এটি নিষ্ক্রিয় ছিল। পরবর্তীতে প্রায় ৫৬ লাখ বছর আগে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের ক্রমাগত চাপের ফলে মেঘালয় পর্বতমালার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর ৪.৬ সেন্টিমিটার গতিতে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে প্রবেশ করায় এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ চাপ বাড়ছে।

নতুন আবিষ্কৃত এই ফাটলরেখার সঙ্গে অতীতের বেশ কয়েকটি বড় ভূমিকম্পের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এর মধ্যে ১৮৮৫ সালের ৭ মাত্রার ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ এবং ১৯২৩ সালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অন্যতম। এমনকি ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের পেছনেও এই ফাটলরেখার ভূমিকা রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে আগে থেকেই ডাউকি ফাটলরেখা এবং ইন্দোবার্মা মেগাথ্রাস্টের মতো বড় দুটি সক্রিয় ফাটলরেখার অস্তিত্ব রয়েছে। এর পাশাপাশি সীতাকুণ্ড, মধুপুর ও জাফলংয়ের মতো আরও কয়েকটি ফাটলরেখা সক্রিয়। নতুন এই আবিষ্কার দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকির তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করলো।

এই গবেষণায় স্যাটেলাইট ম্যাপিং দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘গবেষণা করলে এই অঞ্চলে এমন আরও ফাটলরেখার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তবে ফাটলরেখা থাকা মানেই বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম খোরশেদ আলম এই গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিকে নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, একটি ফাটলের বিস্তৃতি, শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতা এবং কত বছর পর পর ভূমিকম্প ঘটাতে পারে, তা নির্ণয় করাই গবেষকদের মূল কাজ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আক্তারুল আহসানের গবেষণায় এসব তথ্য বিস্তারিতভাবে উঠে আসবে।

উল্লেখ্য, গত ২১ ও ২২ নভেম্বর দেশে পরপর চার দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটির মাত্রা ছিল ৫.৭। এসব ঘটনায় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, যা এ ধরনের গবেষণার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার