Logo
Logo
×

জাতীয়

নির্জন পথে যাচ্ছিলেন অটোরিকশাচালক, কৌশলে বেঁচে ফিরলেন দুই ছাত্রী

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৫ এএম

নির্জন পথে যাচ্ছিলেন অটোরিকশাচালক, কৌশলে বেঁচে ফিরলেন দুই ছাত্রী

সাভার থেকে অটোরিকশায় করে নিজ ক্যাম্পাসের পাশে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে অটোরিকশা চালকের হয়রানির শিকার হয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুই নারী শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, গন্তব্য স্থলে যাওয়ার জন্য রিকশা নিলে চালক তাদেরকে অপরিচিত রাস্তায় নিয়ে যেতে থাকেন। পরে তারা কৌশল করে অন্য রিকশাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছান।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে সাভার থেকে ফেরার পথে আক্রাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হয়রানির শিকার দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জান্নাতুল মাহিয়া ও শারমিন হুমায়রা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানান।

জান্নাতুল মাহিয়া তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘কোথা থেকে শুরু করবো, কীভাবে লিখবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। এটা লিখতে বসেও আমার হাত-পা কাঁপছে। আজ বিকেল ৫টার দিকে ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমার যাওয়ার কথা ছিল টাঙ্গাইল, আর শারমিন হুমায়রার মোহাম্মদপুর। খাগান থেকে সিএন্ডবি যাওয়ার পথে প্রায় ৩ কিলোমিটার জ্যাম দেখে ঠিক করলাম আক্রান বাজার হয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ডে যাবো, তারপর যার যার গন্তব্যে চলে যাবো। আক্রান থেকে রিকশায় উঠলাম, গন্তব্য সাভার। সাভারের পলো মার্কেট পার হতে না হতেই সামনে আরও দেড় কিলোমিটার জ্যাম দেখি। ভাবলাম এভাবে গেলে তো রাত হয়ে যাবে, তাই আজ আর যাওয়া হবে না।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘সিদ্ধান্ত নিলাম ক্যাম্পাসে ফিরে যাবো। রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘মামা রিকশা ঘুরান, আক্রান যাবো।’ তিনি ঘুরিয়ে নিলেন। কিছুক্ষণ পর এক ছেলে রিকশা চাইলে তিনি তাকে নিলেন না। এরপর আমাদেরকে বাম দিকের এক অপরিচিত রাস্তায় ঢুকিয়ে দিলেন। রাস্তা চিনি না দেখে বললাম, মামা, এদিকে যাবো না। তিনি বললেন, ‘দুই মিনিট সামনে গেলেই মেইন রোডে উঠে যাবো।’ তখনও আমরা সন্দেহ করিনি।’

জান্নাতুল মাহিয়া বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর দেখি তিনি রিকশা চালিয়েই যাচ্ছেন এবং খুব আস্তে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। শব্দ এত নিচু যে আমরা শুনতেই পাচ্ছি না। রাস্তাটা এতটাই নির্জন যে চারপাশ অন্ধকার, কোনো বাড়িঘর নেই, নেই দোকান, ল্যাম্পপোস্ট, পথচারী এমনকি কুকুর-বিড়ালও না। পুরো এলাকা নিস্তব্ধ। গুগল ম্যাপে দেখি আমরা এমন জায়গায় আছি যেখানে চার-পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো গার্মেন্টসও নেই! এদিকে সন্ধ্যা ৬ টা পেরিয়ে অনেকক্ষণ। আমরা কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’

তার ভাষ্য, ‘হঠাৎ প্রায় তিনতলা সমান উঁচু জায়গায় একটা মসজিদের মতো স্থাপনা দেখলাম, যেখানে লাইট জ্বলছে। আমি হুমায়রাকে বললাম, ‘আমার খুব পেটব্যথা, বাথরুমে যেতে হবে’। রিকশাওয়ালাকে থামাতে বললাম। তিনি রিকশা থামিয়ে বললেন, ‘আমি আছি, যান’। তারপর রিকশাচালক আবার ফোনে কথা বলতে বলতে জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন। আমরা দ্রুত উপরে উঠলাম। গিয়ে দেখি ওটা মসজিদ নয়, একটা মাজার। আশপাশে কিছু বাড়িও আছে। আমরা দ্রুত বাড়ির মানুষদের পুরো ঘটনাটা বলে সাহায্য চাইলে তারা বিস্মিত হয়ে বলেন, দুপুরেও নাকি এ রাস্তায় কেউ যায় না! এমনকি কয়েকদিন আগেও এখানে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের কয়েকজন দৌড়ে রিকশার দিকে যেতেই রিকশাওয়ালা রিকশা টেনে সোজা পালিয়ে গেল। পরে ওই বাড়ির মানুষই আমাদের আরেকটি রিকশা ঠিক করে দেন। সেই রিকশায় নিরাপদে আক্রানে ফিরে আসি। তখন রাত প্রায় ৮টা।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে লেখেন, এটাই আমাদের নিরাপত্তার বাস্তব চিত্র। তবে নিরাপত্তাহীনতার পুরো দোষ দিয়ে লাভ নেই— শেষ পর্যন্ত ভুলটা আমাদেরই হয়েছে। আমাদের উচিত হয়নি এই দেশে রাত করে এমন নির্জন এলাকায় বের হওয়া।নিজেকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে।

জানা গেছে, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে ঘটনার বিষয়ে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করার বিষয়ে কাজ করা হবে বলে জানান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক ড. শেখ মুহাম্মদ আল্লাইয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শহর ও ক্যাম্পাস এলাকার জীবনযাপন এক নয়। দ্বিতীয়ত, সমস্যা হলে দ্রুত যোগাযোগ করার পদ্ধতি সবাইকে জানতে হবে। জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৯৯-এ ফোন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোল রুম বা প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করা। তৃতীয়ত, যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে থানায় জিডি করার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি জানা থাকা উচিত, যাতে পরে আইনি সহায়তা নেওয়া সহজ হয়। সর্বদা স্টুডেন্ট আইডি কার্ড সঙ্গে রাখার অভ্যাস করতে হবে। আইডি কার্ড থাকলে দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সহায়তা প্রদান সহজ হয়।’

তিনি আরও বলেন, এলাকার নিরাপত্তা ও পুলিশের টহল বিষয়ে সমন্বয় রাখার চেষ্টা চলছে। পাশের থানাগুলো (আশুলিয়া, সাভার ইত্যাদি) ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, কারণ এখানে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী বসবাস করে। অটোরিকশা চালকদের পরিচয়পত্র বা রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতেও কাজ চলছে যাতে একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার