Logo
Logo
×

জাতীয়

ক্যান্সার জয় করা সেই প্রিয়াংকা এখন বিসিএস ক্যাডার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম

ক্যান্সার জয় করা সেই প্রিয়াংকা এখন বিসিএস ক্যাডার

জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে কীভাবে বিজয়ের মুকুট পরতে হয়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা রায়। মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারকে (একিউট লিউকেমিয়া) মোকাবিলা করে তিনি আজ পূরণ করেছেন তার স্বপ্ন। ৪৫তম বিসিএস এ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ ক্যাডারে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এটি শুধু একটি চাকরি প্রাপ্তির গল্প নয়, বরং অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সাহস আর সময়ের বিরুদ্ধে এক লড়াকু নারীর মহাকাব্য।

যবিপ্রবির ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এই কৃতী শিক্ষার্থী শুরু থেকেই ছিলেন ব্যতিক্রমী। বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করা প্রিয়াংকা একাধিক সেমিস্টারে পেয়েছিলেন ৪.০০-এর মধ্যে ৪.০০ সিজিপিএ। তাঁর স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করা, যেখানে বাবা পরিচিত হবেন ‘প্রিয়াংকার বাবা’ হিসেবে।

কিন্তু তার সেই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে অন্ধকার নিয়ে আসে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই। ধরা পড়ে একিউট লিউকেমিয়া (ব্লাড ক্যান্সার)। চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। এই কঠিন রোগ তাঁর পুরো পৃথিবীকে উল্টে দেয়। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবার পক্ষে ২৫ লক্ষাধিক টাকার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তবুও হাল ছাড়েননি বাবা। আর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন যবিপ্রবির সহপাঠীরা।

হাসপাতালের শয্যা থেকে ক্যাডারের মঞ্চে

সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল প্রিয়াংকার নিজস্ব অদম্য মনোবল। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি জীবনকে ভালোবেসেছেন, স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেছেন। দীর্ঘ চার মাসের কঠিন চিকিৎসা শেষে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন—আরও বেশি শক্তিশালী, আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে।

তবে সুস্থ হয়ে ফেরার পর একটি দুঃখ তাঁকে পীড়া দিত। অসুস্থতার কারণে ইয়ার লস হওয়ায় তিনি চ্যান্সেলরস অ্যাওয়ার্ড, প্রাইম মিনিস্টার অ্যাওয়ার্ডসহ প্রাপ্য সম্মাননাগুলো পাননি। এই আক্ষেপ থেকেই তাঁর মনে দৃঢ় সংকল্প জন্ম নেয়: যেভাবেই হোক, তাঁকে সেরা হতে হবে! আর সেই সংকল্প থেকেই শুরু হয় বিসিএস-এর জন্য তাঁর ম্যারাথন প্রস্তুতি।

কোনো কোচিং-এর সহায়তা ছাড়াই, শুধু নিজের অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে তিনি প্রস্তুতি নেন। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে তিনি আবেদন করেন। প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে পার হওয়ার পর, চাকরি চলাকালীন সময়েই তিনি ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন। এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি পান, যার প্রস্তুতিও ছিল বিসিএস-এরই ফল।

সব সংগ্রাম আর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বুধবার যখন ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়, প্রিয়াংকা রায় তখন বাক্যহারা। তাঁর পরিবারের কাছে প্রিয়াংকার বেঁচে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ, আর সেই আনন্দের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার এই অর্জন তাঁদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে প্রিয়াংকা রায় জানান, ব্লাড ক্যান্সার মানেই ধরে নেওয়া হয় আমি আর বাঁচব না। ক্যান্সার থেকে যখন বেঁচে ফিরলাম, তখন মনে হয়েছিল আমার দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। এই চিন্তাই থেকেই আমার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু।

তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের কাছে আমি বেঁচে আছি এটাই তাদের জন্য খুশির কারণ ছিলো। তার উপর আমার ব্যাংকে চাকরি আবার সেই সাথে বিসিএসের এ ফলাফল শুনে তারাও অনেক খুশি, আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সৎ সাহস, ধৈর্য্য, আত্মবিশ্বাস রেখে কেও যদি কোনো কিছু মন থেকে চাই এবং সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে, তাহলে সে অবশ্যই সফল হবে।

মাগুরার বাউলিয়ার এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা প্রিয়াংকা আজ শুধু একজন বিসিএস ক্যাডার নন, তিনি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য জীবন্ত অনুপ্রেরণা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার