রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের একাধিক কারখানা, জমি এবং রাজধানীর ধানমন্ডির করপোরেট অফিস ‘বেল টাওয়ার’ নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাংকটি জানায়, বেক্সিমকোর বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রি করে সুদসহ এক হাজার ৩২২ কোটি টাকার অধিক বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করা হবে। আগ্রহী ক্রেতাদের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নিলামের তালিকায় রয়েছে গাজীপুরে ৩,৫২৭ ডেসিমেল জমি ও কারখানা, আশুলিয়ায় ১৪৬.৬৫ ডেসিমেল জমি, নারায়ণগঞ্জে ৪৪০ ডেসিমেল জমি এবং ১৫তলা করপোরেট অফিস বেল টাওয়ার। এছাড়া অ্যাসেস ফ্যাশনস লিমিটেডের সম্পদও নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে জনতা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
গত ২১ নভেম্বর ব্যাংকটি বেক্সিমকো গ্রুপের আরও তিন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিলামে তোলার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেড (ইউনিট-১ ও ইউনিট-২), আরবান ফ্যাশনস এবং অ্যাপোলো অ্যাপারেলস যেগুলোর সম্মিলিত মূল্যায়ন দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে নিলাম ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়, যখন দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ ‘রিভাইভাল’ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘ইকোমিলি’ বেক্সিমকোর স্থবির টেক্সটাইল ইউনিটগুলো পুনরায় চালু করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিল। প্রতিষ্ঠান দুটি বেঞ্চমার্ক পিআরের মাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংকের আকস্মিক নিলাম সিদ্ধান্তে তারা ‘স্তম্ভিত’।
তাদের দাবি, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানা পুনরুজ্জীবিত করতে তারা লিজচুক্তির প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে অগ্রসর পর্যায়ের আলোচনায় ছিল। স্থানীয় শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট জনপদের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ও সম্পন্ন হয়েছে। কারখানা পুনরায় চালুর আশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো অপেক্ষায় ছিল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক দুই সংস্থা নিলাম প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে, এ সিদ্ধান্ত দক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে বস্ত্র ও পোশাক খাতে সাম্প্রতিক সময়ে যে নতুন করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রবাহ তৈরি হয়েছে, নিলাম উদ্যোগ তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পসম্পদ নিলামে তোলার মতো সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা, সতর্কতা এবং শ্রমিক, বিশেষজ্ঞ ও শেয়ারহোল্ডারদের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তারা।