‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেট নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ ডিসি সারওয়ারের
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
সিলেট নগরীর ২৩টি বিপজ্জনক ভবন ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই অপসারণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় নগর ভবনে শুরু হওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন-নবী। ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, সিলেট সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কমকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেটে ভূমিকম্প মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে আলোচনা ও করণীয় সম্পর্কে বেশকিছু জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিলেট নগরের ২৩টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল প্রায় ছয় বছর আগে। সেই সময় ভেঙে ফেলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু অদৃশ্য কারণে নির্বিকার ছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ফলে ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেট মহানগরীতে সিসিকের দায়বদ্ধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের আতঙ্কের পরিপ্রেক্ষিতে চিহ্নিত এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন খুব শীঘ্রই ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানিয়েছেন সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, চিহ্নিত ভবনগুলোতে এখনো কেউ কেউ বসবাস করছে বা কাজ করছে। দ্রুত অপসারণ না করলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্যই আমরা জরুরিভিত্তিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন ইতোমধ্যে একাধিক ওয়ার্কশপ করেছে, তবে সংকীর্ণ রাস্তাগুলোর কারণে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারার সমস্যাটি রেসকিউ কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে।
জানা যায়, ২০১৯ সালে কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকাবিলায় সিলেট নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা, সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষাসহ কিছু উদ্যোগ নেয় সিসিক। সে সময় নগরের প্রায় ৪২ হাজার বহুতল ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ সংকটে সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি। যদিও অনেক পুরনো কয়েকটি ভবন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করেছিল সিসিক।
এরপর নগরের সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশন ও রাজা ম্যানশন নামের ৭টি বিপণিবিতানকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত ১০ দিন পর ভবনগুলো রঙ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওই তালিকার চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংস্কার করা হলেও দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি স্থাপনাগুলোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক। এসব স্থাপনার মধ্যে বাসাবাড়ি, বিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এবং নগর প্রশাসনের দুর্বলতাকে পুঁজি করে উলটো খোলস পালটে ফেলা হয়েছে এসব স্থাপনার।
সিসিকের তালিকানুযায়ী নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হলো- কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দর বাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেইটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেন এলাকার ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ি এলাকার ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা- ৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা- ৩৭৭/৮ ও শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা- ৩৭৭/৯, বনকলাপাড়া এলাকার নূরানি-১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ের পৌর বিপনী ও পৌর শপিং সেন্টার এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি- প্রভাতী ও শ্রীধরা হাউস।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে সিলেটের অধিকাংশ স্থাপনাই উচ্চ মাত্রার ভূকম্পন সহ্য করতে সক্ষম নয়। সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে, যার বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল, যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেট শহরে গড়ে উঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, সিলেট মহানগরীতে যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো রয়েছে সেই ভবনগুলোর সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তারা খুব শীঘ্রই একটি পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে একটি কমিটি আছে, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং যে ভবনগুলোতে সংস্কার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কাগজপত্রাদি যাচাই করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে।