ভূমিকম্প হলে বাথরুম নিরাপদ— এমন ধারণা সম্পূর্ণভাবে সত্যি নয়; আবার পুরোপুরি মিথ্যাও বলা যাবে না। কারণ এটি কখনই নিরাপদ আশ্রয়ের তালিকায় পড়ে না। প্রথম স্থানে তো নই। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— শান্ত থাকা, ঠিকমতো ভবনের নিচে নেমে বসে আশ্রয় নেওয়া এবং ঝুঁকি কমানোর সঠিক নিয়ম জানা। বাথরুম নয়, সঠিক জ্ঞানই ভূমিকম্পের সময় সত্যিকার নিরাপত্তা দিতে পারে।
সম্প্রতি দেশে ভূমিকম্প হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে— ভূমিকম্পের সময় কি সত্যিই বাথরুম সবচেয়ে নিরাপদ স্থান? আবার অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন— ভূমিকম্প শুরু হলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে যেতে। কিন্তু এ ধারণা কতটা বৈজ্ঞানিক? আসলে কি বাথরুম সত্যিই নিরাপদ? নাকি এটি কেবল ভুল ধারণা?
চলুন জেনে নেই বিজ্ঞান কী বলে—
ভূমিকম্প সহনশীলতার অভাবে যে কোনো তলায় বা যে কোনো কক্ষেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা হলো— সচেতনতা, প্রশিক্ষণ ও সঠিক করণীয় জানা এবং নির্মাণমান উন্নয়ন।
সাধারণত বাথরুম ভবনের পিলারের কাছে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাথরুমের দেয়াল অন্যান্য কক্ষের তুলনায় কিছুটা মোটা হয়। সে কারণেই অনেকের ধারণা— বাথরুমের দেয়াল মজবুত ও ছাদ তুলনামূলক বেশি শক্ত, তাই ভূমিকম্পে সহজে ভেঙে পড়ে না। এ ধারণার পেছনে কিছু সত্যতা আছে, তবে বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে গবেষণা।
আর ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে বলেন, বাথরুম কখনো নিরাপদ হতে পারে না। এ ভুল ধারণা থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ দৌড়ে বাথরুমে ঢোকার চেষ্টা করলে পড়ে যাওয়া, দরজায় আঘাত পাওয়া, দরজা আটকানো এবং কাঁচ বা টাইলসে আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে ঠিক এই ভুল ধারণা থেকে।
আবার অনেকেই মনে করেন, কিছু ভবনে বাথরুম পিলারের সংলগ্ন থাকে এবং কাঠামোটি কিছুটা মজবুত হয়। তাই তুলনামূলক ক্ষতি কম হতে পারে। তবে এটি সব ভবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। নিরাপত্তা মূলত নির্ভর করে পুরো ভবনের নির্মাণমান এবং ভূমিকম্পের শক্তির ওপর। অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। কারণ হলো— বাথরুমে সবচেয়ে বেশি কাঁচ ও টাইলস থাকে। আর দেয়ালের টাইলস খসে পড়লে, আয়না ভেঙে ছড়িয়ে গেলে মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে। পানির পাইপ ফেটে যেতে পারে। পাইপ বা ট্যাপ ভেঙে পানি ছড়িয়ে পড়লে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া গিজার বা হিটার থাকলে বিদ্যুৎজনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি দরজা আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এসব কারণে বাথরুমকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা ঠিক হবে না।
এ ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশেই ভূমিকম্প মোকাবিলায় একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর সেটি হলো—শক্ত আসবাবের নিচে আশ্রয় নেওয়া। কম্পন বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে জানালা, কাঁচ, ভারি আলমারি থেকে দূরে থাকা এবং শক্ত টেবিল, ডেস্ক বা বিছানার নিচে আশ্রয় নেওয়া। এ সময় লিফট ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আর দরজার সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন না। বরং দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে নিচে অপেক্ষা করা উচিত।