তুর্কিতে নয়া ভূমিকম্প সতর্কতা, মুহূর্তেই বাঁচবে হাজারো প্রাণ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তুরস্কের বোয়াজিচি ইউনিভার্সিটির কান্দিলি অবজারভেটরি অ্যান্ড আর্থকোয়াক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (কেআরডিএই)।
নতুন এই সতর্কতা ব্যবস্থা ২ অক্টোবর মারমারা অঞ্চলে হওয়া ৫ দশমিক ০ মাত্রার ভূমিকম্প শুরুর মাত্র ৮ দশমিক ৪ সেকেন্ডে প্রথম সতর্ক বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনস্টিটিউটটি সম্প্রতি ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা প্রকল্পের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই ধাপে তারা এমন একটি আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করছে, যা ভূমিকম্পের সবচেয়ে দ্রুত ছড়ানো প্রাথমিক তরঙ্গ শনাক্ত করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম হবে।
ফলে কর্তৃপক্ষ এবং জনসাধারণ উভয়ই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু সময় পাবে যা ভূমিকম্পের প্রভাব কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশটির মারমারা অঞ্চল তুরস্কের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার একটি। উচ্চ ঝুঁকির কারণেই কেআরডিএই এই অঞ্চলে তাদের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এই অগ্রগতির অন্যতম প্রধান দিক ছিল মারমারা অঞ্চলের ভূমিকম্প পরিমাপ কেন্দ্রগুলোর ডেটা ট্রান্সমিশন অবকাঠামো উন্নয়ন। এই আপগ্রেডের ফলে এখন ভূমিকম্পের সংকেত কান্দিল্লি অবজারভেটরিতে সিগন্যাল ট্রান্সমিশনে পৌঁছাতে মাত্র ০ দশমিক ২ সেকেন্ড সময় লাগে, যা আগের তুলনায় অনেক দ্রুত।
রিয়েল-টাইম ভূকম্পন ডেটা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বিশেষায়িত ‘আর্লি ওয়ার্নিং সফটওয়্যারের’ মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। এই সফটওয়্যার মুহূর্তেই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ও সম্ভাব্য মাত্রা হিসেব করে। ফলে সিস্টেমটি খুব দ্রুত, প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সতর্কবার্তা পাঠাতে পারে।
মারমারা সাগরের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি এই নতুন সতর্কতা ব্যবস্থার কার্যকারিতা পরীক্ষার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে। ভূমিকম্পের তরঙ্গগুলো উপকূলের স্টেশনগুলোতে পৌঁছাতে প্রায় পাঁচ সেকেন্ড সময় নেয়। এরপর সফটওয়্যার দ্রুত বিশ্লেষণ করে মোট ৮ দশমিক ৪ সেকেন্ডের মধ্যে প্রথম সতর্কবার্তা পাঠায়।
এই পারফরম্যান্সটি প্রমাণ করছে যে, সিস্টেমটি বাস্তব ভূমিকম্প পরিস্থিতিতেও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম যা এর নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় কিআরডিএই ইতোমধ্যে একটি আইওএস ভিত্তিক মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যা ব্যবহারকারীদের কাছে সরাসরি ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দেবে।
বর্তমানে এই অ্যাপটি প্রায় ২ হাজার ৫০০ ডিভাইসে পাইলট টেস্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে বাস্তব ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো ব্যবহার করে অ্যাপটির সতর্কবার্তা দেওয়ার সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে কিআরডিএই তুরস্কজুড়ে এই আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের একটি বড় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে— সারাদেশে আরও লো-ল্যাটেন্সি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ স্টেশন স্থাপন, মোবাইল অ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ তৈরি, এবং একই সময়ে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম সফটওয়্যার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ।
এই উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে তুরস্কের ভূমিকম্প প্রস্তুতি আরও উন্নত হবে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।