ঢাবি ছাত্রীর শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘স্যরি টু মি’
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মোছাঃ সুমি খাতুনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে কুষ্টিয়ার নিজ বাড়ি থেকে এ মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
সুমির পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, তিনি রাত ১টার দিকে আত্মহত্যা করে করেছেন। পুলিশও তার আত্মহত্যার কথা নিশ্চিত করেছে।
আত্মহত্যার আগে সুমি একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। সে পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, `SORRY 2 ME….’ যার মানে হল- ‘আমি নিজের কাছে নিজেই দুঃখ প্রকাশ করছি অর্থাৎ আসলে আমার কিছুই করার ছিলনা’।
সুমির এ পোস্টটি শেয়ার করে আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, সুমি খাতুন (২৫) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই শিক্ষার্থী গভীর রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শয়নকক্ষে আত্মহত্যা করেন। তিনি ২০১৮-১৯ সেশনের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া এলাকার গোলাপ রহমানের কন্যা ছিলেন।
সুমির ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে তিনি লেখেন, আগেরদিন গভীর রাতে ওই ছাত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে 'SORRY 2 ME' লিখে পোস্ট করেন। ধারণা করা হচ্ছে- ফেসবুকে এমন পোস্ট করার পরেই তিনি গলায় ফাঁস নিয়েছেন। তার এই মৃত্যুতে পরিবার, বন্ধু মহল ও স্থানীয়দের মাঝে শোকের মাতম নেমে আসে।
তিনি আরও লেখেন, পারিবারিক আর্থিক দীনতা ও শারিরীক অসুস্থতার সাথে তুমুল সংগ্রাম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী সুমি। তার এই সংগ্রামী জীবনের গল্প এলাকার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা ছিল। অবশেষে শারিরীক অসুস্থতা ও পারিবারিক আর্থিক অনটনের কাছে পরাজিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
সহপাঠীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিরল রোগ ফাইব্রাস ডিসপ্লেশিয়াসহ গুরুতর শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন সুমি। এ রোগের কারণে তার হাঁড় ক্ষয় গিয়েছিল এবং একাধিকবার অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ব্যথা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও সুমি সবসময় চেষ্টা করতেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বিভিন্ন ডাক্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্থায়ী সমাধান মিল ছিল না।
তারা আরও জানান, পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপ এবং ক্রমাগত যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। একা একাই লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি বলে তাদের ধারণা।
এ বিষয়ে সুমির ছোট খালা মোসা. কাঞ্চনী বলেন, আজ ভোর রাতে (ফজরের নামাজের আগে) সুমির বাবা ও মা তার রুমে মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে পরে রশি কেটে নামায়। সকালে পুলিশ এসে তার রোগের রিপোর্টগুলো দেখে যায় এবং তার বাবাকে সাথে করে থানায় নিয়ে যায় এবং তাকে কাফন করতে বলা হয়। আজ বাদ যোহর তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
সুমি বেশ মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অসীম সরকার। তিনি বলেন, মেয়েটি খুব ভালো ও মেধাবী ছিল। অসুস্থতার কারণে এক বছর পড়াশোনায় বিরতিও দিতে হয়। তার এভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা বিভাগের সবাই শোকাহত। আর কোনও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যেন এমন না হয়, সেই কামনা করেন তিনি।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, সুমি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তার লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।