মানব মূত্র নিয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য
বদলে যেতে পারে ফসল উৎপাদনের পদ্ধতি
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০৬ এএম
মানব মূত্রই হতে পারে ভবিষ্যতের সাশ্রয়ী সার ও কীটনাশক— সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চমকপ্রদ তথ্য। নিউ সায়েন্টিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোদে ১–২ মাস রেখে দেওয়া মানব মূত্র কৃষিজমিতে ব্যবহার করে নাইজারের গবেষকেরা উল্লেখযোগ্য ফল পেয়েছেন।
পশ্চিম আফ্রিকার বহু এলাকায় মাটি অনুর্বর এবং রাসায়নিক সার-ওষুধের দাম কৃষকদের নাগালের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে সূর্যালোকে পরিপক্ব করা মানব মূত্র মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পোকামাকড় দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে।
গবেষকেরা জানান, রোদে রেখে দেওয়া মূত্রের তীব্র গন্ধই পোকামাকড় দূরে রাখতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুও নষ্ট হয়।
দান দিকো দানকুলোদো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইব্রাহিম বউকারি বাউয়া বলেন, 'পশ্চিম আফ্রিকার মাটির উর্বরতা খুব কম। কৃষকদের জন্য ব্যয়বহুল সার কেনা কঠিন। মানব মূত্র তাদের জন্য হতে পারে সাশ্রয়ী বিকল্প।'
পরীক্ষায় দেখা যায়, যেসব প্লটে মানব মূত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোতে পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এলাকার তুলনায় ২০ গুণেরও বেশি কম ছিল। ফসলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম কীটনাশক ব্যবহৃত জমির কাছাকাছি ফলও পাওয়া গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বায়োসলিড বা প্রক্রিয়াজাত মানব-বর্জ্য দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হলেও PFAS ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ পাওয়া যাওয়ায় তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। মানব মূত্রেও কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে। ফলে সরাসরি মূত্র ব্যবহারের আগে পরীক্ষা বা পরিশোধন প্রয়োজন হতে পারে।
সারের বিকল্প হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে। টেক্সাসে তৈরি করা হচ্ছে এমন হাইড্রোজেল, যা বাড়তি নাইট্রেট শোষণ করে পানি ও মাটি দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। আফ্রিকার গবেষকেরা মানব মূত্রভিত্তিক এই পদ্ধতির কার্যকারণ— কীভাবে এটি কাজ করে এবং কীভাবে আরও উন্নত করা যায়— তা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি ও কৃষিজমিতে ব্যবহৃত উপকরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা এখন অপরিহার্য। সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে কম্পোস্ট বা ঘরে তৈরি জৈব সার ব্যবহারের কথাও তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সূত্র: ইয়াহু