ভূমিকম্পে ঢাকার চেয়েও বেশি বিপদে দেশের যেসব অঞ্চল
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
মাত্রই দুদিন আগে যে প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল, তার আতঙ্ক থেকে এখনও বের হতে পারেনি দেশবাসী। শুক্রবারের সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে এরই মধ্যে তিনবার আঘাত এনেছে আফটার শক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শঙ্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। চলতি মাসে আঘাত হানতে পারে আরও বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্পেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে ছোট ও মাঝারি এই ভূমিকম্পগুলো। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তেমন ঝুঁকিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে, নতুন উদ্ভূত এ আতঙ্কের মধ্যেও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অবস্থানে আছে দেশের কিছু অঞ্চল।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানচিত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশকে মূলত তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো জোন-১ (উচ্চঝুঁকি), জোন-২ (মাঝারি ঝুঁকি) এবং জোন-৩ (নিম্ন ঝুঁকি)।
এর মধ্যে সাম্প্রতিক গবেষণা এবং ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সম্ভাব্য ভূমিকম্পগুলোতে ঢাকার চেয়েও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল। আর এই উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জোন-১ এ অবস্থানরত অঞ্চলগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকার কিছু অংশ (রাঙামাটি, বান্দরবান)।
এরপরই মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বা জোন-২ এ অবস্থান করছে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বগুড়া এবং রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ এলাকা।
সে তুলনায় ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।
নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ (জোন-৩) এলাকার জেলাসমূহ:
খুলনা বিভাগ: খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি।
রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাংশ: (কিছু অংশ জোন-২-এর হলেও পশ্চিমাংশ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলগুলো মূল টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারি (যেমন: ডাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট বা মিয়ানমার ফল্ট লাইন) থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকায় সরাসরি বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের প্রধান পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে।
যদিও নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলের জেলাগুলো বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ; তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, দুর্বল অবকাঠামো বা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হলে রিখটার স্কেলে কম মাত্রার কম্পনেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।