বড় ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে লক্ষাধিক প্রাণহানির শঙ্কা
ঝুঁকিতে ৭০–৮০ শতাংশ ভবন
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে নগরীর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং প্রাণহানি লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান টেকটনিক প্লেট—বার্মিজ–ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশ–ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশ–মিয়ানমার (ইউরেশিয়ান)—অত্যন্ত নিকটবর্তী হওয়ায় এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়ম–নীতি না মেনে গড়ে ওঠা বিপুলসংখ্যক বহুতল ভবন, যা মাত্র ৬০ বর্গমাইলের পুরো নগরীকেই দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নজিরবিহীন এই ঝাঁকুনিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের চারদিকে অবস্থানরত সক্রিয় টেকটনিক প্লেটগুলো অস্বাভাবিক গতিশীল। চট্টগ্রাম নগরীর ভূগর্ভেও একটি মাইনর টেকটনিক প্লেট সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। প্লেটগুলোর ধারাবাহিক নড়াচড়ার কারণে ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ২১২ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। একই সময়ে নগরীতে অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক হাজার।
চুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামের বহু ভবনের বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। এগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানায়, নগরীতে বর্তমানে ৪ লাখ ১ হাজার ৭২১টি বহুতল ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৪৮০টি ভবনের উচ্চতা ৬ থেকে ১০ তলা, আর ৪৮৪টি ভবন ১০ তলার বেশি। অনেক ভবনে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় নির্মাণসামগ্রী দ্রুত ক্ষয়প্রবণ হওয়া এবং সংকীর্ণ সড়কগুলো দুর্ঘটনার সময় উদ্ধারকাজে বড় বাধা হতে পারে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার এবং সাগরের নিকটে হওয়ায় নির্মাণসামগ্রীর কিউরিং প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ভবনগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
গত চার বছরে দেশের ভেতরে ৩৭টি ভূকম্পন ঘটলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে শুক্রবারের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প রাজধানী ও চট্টগ্রাম—দুই জায়গাতেই বাস্তব ঝুঁকি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম বলেন, যেসব ভবন রেট্রোফিটিং করে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। আর যেগুলো টেকনিক্যালি ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। উদ্ধারকারী বাহিনীর গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে সংকীর্ণ সড়কগুলো প্রশস্ত করতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত নিয়মিত মানুষকে সতর্ক করা।
বাংলাদেশ–ইন্ডিয়ান প্লেটের সৃষ্ট বড় ভূকম্পনের উদাহরণ অতীতেও রয়েছে। ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। গত ১০৭ বছরে দেশে অনুভূত বেশিরভাগ ভূকম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩ থেকে সাড়ে ৫।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো সময় ঘটতে পারে এবং যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।