Logo
Logo
×

জাতীয়

ভূ-প্লেটের চাপ বেড়েই চলেছে, আঁতকে ওঠার মতো তথ্য দিলেন বিশেষজ্ঞরা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১২ পিএম

ভূ-প্লেটের চাপ বেড়েই চলেছে, আঁতকে ওঠার মতো তথ্য দিলেন বিশেষজ্ঞরা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। এদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যা কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়ায় তা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ছিল এটি। এতে অবকাঠামোগত প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিশুসহ নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আহত আছে কয়েকশ।

এদিকে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিচ্ছে বলে সতর্ক করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভূগর্ভে চাপ ক্রমেই বাড়ছে এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো পরিবেশ দ্রুত তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিকভাবে তিনটি বড় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। আসাম ফল্ট, ডাউকি ফল্ট এবং মিয়ানমারের সেগাইং ফল্টের চ্যুতি দিনদিন বাড়ছে। ফলে ভূগর্ভে শক্তি সঞ্চয়ের হার বেড়ে গেছে, যা বড় ধরনের ভূকম্পনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

গত ৩০ বছরে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেখল—এটি এখানেই থেমে থাকবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যেকোনো সময় দেশে ৬ থেকে ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে—এ অঞ্চলে ভারতীয় (ইন্ডিয়া) প্লেট পূর্বদিকে এবং বার্মা প্লেট পশ্চিমদিকে ধাবিত হচ্ছে। বার্মা প্লেটের নিচে ভারতীয় প্লেট তলিয়ে যাচ্ছে, যাকে ‘সাবডাকশন জোন’ বলা হয়।

জিপিএস পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিবছর ১ থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত সংকোচন হচ্ছে। তার মতে, এ জোনে ইতোমধ্যে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী হওয়ার কারণ জানালেন বিশেষজ্ঞরা

বিভিন্ন গবেষক জানান, এ অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ১০০-১৫০ বছর পরপর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০-৩০০ বছর পরপর ঘটে থাকে। সে হিসেবে বাংলাদেশে সামনে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা খুবই প্রকট।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ আর্থকোয়াক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পটির গভীরতা প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২০ সেকেন্ড। এটি ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের আরেকটি আগাম সংকেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ১৮৬৯ সালের কাছাড় (৭ দশমিক ৬ মাত্রা), ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল ভূমিকম্প (৭ দশমিক ১), ১৮৯৭ সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প (৮ দশমিক ১) এবং ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প (৭ দশমিক ৬ মাত্রা)—এসব বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস এই অঞ্চলের ঝুঁকি স্পষ্ট করে।

ড. আনসারীর মতে, ১৯৩০ সালের পর থেকে এ অঞ্চলে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়ছে। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন সাধারণ ঘটনা; গত কয়েক বছরে সেগুলোর সংখ্যাও বেড়েছে।

বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ঢাকা

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানান, এর আগে বড় ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল সাধারণত বাংলাদেশের বাইরে ছিল। এবার তা দেখা গেছে দেশের ভেতরেই—নরসিংদীর মাধবদীতে। ঢাকার আগারগাঁও আবহাওয়া অফিস থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ঢাকার এত কাছাকাছি এত বড় মাত্রার ভূমিকম্প এই প্রথম, যা বিশেষজ্ঞদের আরও উদ্বিগ্ন করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবাইয়াত কবির বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ইন্ডিয়ান ও ইউরোশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় দেশের বেশ কিছু অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি জানান, দেশের ‘আর্থকোয়েক রিস্ক জোন’-এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ—সিলেট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে ঝুঁকি সর্বোচ্চ। মধ্যাঞ্চলের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মাঝারি ঝুঁকিতে এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার